পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
চিঠির টুক্‌রি
১৭৯

দেওয়া-নেওয়া নিয়ে-তা নিয়ে লাভ লোকসান ঘটে কিন্তু তা নিয়ে কেউ গান গায় না, নাচে না, মূর্ত্তি বানাতে বসে না। তা নিয়ে যা লেখালেখি হয় তা হিসেবের খাতায়, সেই খাতায় কবিত্ব ফলাতে গেলেই মনিবের কাছে কানমলা খেতে হয়। আইন্‌ষ্টাইন বেহালা বাজাতে পারেন এবং ভালোবাসেন কিন্তু রেলেটিভিটি নিয়ে সঙ্গীত রচনার কথা তার মনে হয়নি, সেটা তাঁর পক্ষে ও তাঁর বিজ্ঞানের পক্ষে ভালোই হয়েছে। রেলেটিভিটি তত্ত্বে দেশ ও কালের যুগলমিলন ঘটেছে ব’লে কোনো কবি যদি তাই নিয়ে সনেট্‌ লিখ্‌তে বসেন, তাহলে আপত্তি করব না যদি রচনাটা ভালো হয়। কিন্তু সেই উপলক্ষ্যে সাহানা রাগিণীর নাড়া খেয়ে রেলেটিভিটি তত্ত্বটা ঘুলিয়ে যাবে সে কথাটা ধ’রে নিতেই হবে। তোমার মতে, স্বয়ং বিজ্ঞান যখন কবিত্বের আসরে নামবে সেই যুগে অকাম প্রেমের জায়গায় লালসার আকর্ষণ, মানুষের স্বভাবের অতীত ভাবুকতার জায়গায় স্বভাবসঙ্গত প্রবৃত্তি সাহিত্যে সম্মান পাবে।—কথাটা ভেবে দেখা যাক। কলকারখানা জিনিষটা স্বভাবসঙ্গত নয়। মানুষের হাতদুখানা স্বভাবদত্ত, সেই হাত দিয়ে মাটি খোঁড়াটা ছিল তার পক্ষে স্বাভাবিক, খুঁড়তে গায়ের জোরও লাগত বেশি। অথচ তোমার মতে কত্রিম কলকারখানায় মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব এবং সেইজন্যে সেইটেই কবিতার বিষয় হওয়া উচিত, তাই ট্র্যাক্‌টার তোমাকে মুগ্ধ করছে। অথচ যাকে তুমি ন্যাচারাল ইনষ্টিঙ্ক্‌ট অর্থাৎ সহজ প্রবৃত্তি বলেছ সেটাকে তুমি বড়ো বলেছ মানুষের বানানো সেণ্টিমেণ্টের চেয়ে। এটা যে উল্‌টো কথা হোলো। সায়ান্সের বেলায় মানুষ পশুর স্বাভাবিক বুদ্ধি ছাড়িয়ে নিজ চেষ্টায় বড়ো হয়ে উঠবে অথচ তার চরিত্রের বেলায় মানুষ পশুর সহজ প্রবৃত্তির দিকে গেলেই তার বাহাদুরী এ কেমনতরো কথা হোলো। ক্ষিদে পেলেই কুকুর যেমন-তেমন জায়গা থেকে যেমন-তেমন ক’রে খায়, ক্ষিদের এইটেই স্বভাব। কিন্তু মানুষ রেঁধে খায়,