পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৮০
বিচিত্র প্রবন্ধ

সাজিয়ে খায়, যেমন-তেমন ক’রে খাওয়াটাকে ঘৃণা করে। মানুষ ক্ষিদের ইন্‌ষ্টিঙ্ক্‌টের সঙ্গে আর্টের আনন্দ মিলিয়ে তবেই খেয়ে সুখ পায়। সে কুকুরের মতো খায় না ব’লে কেউ তাকে সেণ্টিমেণ্টাল ব’লে উপহাস করে না। অসভ্য মানুষেরা যেমন-তেমন ক’রেই খায় তাই ব’লে তারাই যে উঁচুদরের মানুষ এমন কথা কেউ বলে না। কামুকতা নিয়েই মানুষ পূরো তৃপ্তি পায়নি ব’লেই প্রেমিককে বড়ো করে তুলেছে। তাতে আনন্দের গভীরতা প্রবলতা ও স্থায়িকতা বেশি তাই তার মূল্য বেশি। স্ত্রীপুরুষের সম্বন্ধ নিতান্তই যেমন-তেমনভাবে যদি ঘটে তাহোলে সেটা কুকুরদের সমান হয় ব’লেই যদি তাকে প্রবল ও পুরুষোচিত বলা হয় তাহোলে পালা ফেলে দিয়ে ধূলো থেকে খাবার খাওয়া চাই এবং ট্র্যাকটার পুড়িয়ে হাত দিয়ে আঁচড়ে মাটি চাষ করা কর্ত্তব্য। তুমি বলবে হাত দিয়ে মাটিখোঁড়ার চেয়ে ট্র্যাক্‌টার দিয়ে চাষ ক’রে ফল বেশি পাওয়া যায়, আমি বলব অমিশ্র কামুকতার চেয়ে প্রেমিতায় আনন্দের পূর্ণতা বেশি। ভালো ক’রে খাওয়াও মানুষের সৃষ্টি তেমনি স্ত্রীপুরুষের সম্বন্ধকে সংযমে ত্যাগে শোভনতায় ভরিয়ে তোলাও মানুষের। কেবল শক্তির নয়, আনন্দেরও একটা সায়ান্স আছে, সেই সায়ান্সে মানুষের উপভোগকে তার সহজ পশুত্ব থেকে বড়ো ক’রে তুলেছে, তার বিচিত্র সৌন্দর্য্যসৃষ্টিকে উদ্বোধিত করছে। এতদিন তো মানুষের পশুপ্রবৃত্তিকে দাবিয়ে রাখাকেই বলিষ্ঠতা ব’লে জানত, আজ কি তার উল্টো কথা বলবার দিন এল। যে ভাবীযুগে কেবল সায়ন্সই মানুষের আদিমশক্তিকে ছাড়িয়ে যাবে আর তার চরিত্রই নামবে আদিমতার দিকে, সে যুগে কবিতাই থাকবে না।