পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সরােজিনী প্রয়াণ
১১

দেখি সম্মুখে আমাদের জাহাজের উপর সবেগে একটা লোহার বয়া ছুটিয়া আসিতেছে, অর্থাৎ আমরা বয়ার উপরে ছুটিয়া চলিতেছি। কিছুতেই সামলাইতে পারিতেছি না। সকলেই মন্ত্রমুগ্ধের মত বয়াটার দিকে চাহিয়া আছি। সে জিনিষটা মহিষের মতো ঢুঁ উদ্যত করিয়া আসিতেছে। অবশেষে ঘা মারিল।


(৩)

 কোথায় সেই অবিশ্রাম জলকল্লোল, শত লক্ষ তরঙ্গের অহোরাত্র উৎসব, কোথায় সেই অবিরল বনশ্রেণী, আকাশের সেই অবারিত নীলিমা, ধরণীর নবযৌবনে পরিপূর্ণ হৃদয়োচ্ছ্বাসের ন্যায় সেই অনন্তের দিকে চির-উচ্ছ্বসিত বিচিত্র তরুতরঙ্গ, কোথায় সেই প্রকৃতির শ্যামল স্নেহের মধ্যে প্রচ্ছন্ন শিশু লোকালয়গুলি—উর্দ্ধে সেই চিরস্থির আকাশের নিম্নে সেই চিরচঞ্চলা স্রোতস্বিনী!—চিরস্তব্ধের সহিত; চিরকোলাহলময়ের, সর্ব্বত্রসমানের সহিত চিরবিচিত্রের, নির্ব্বিকারের সহিত চিরপরিবর্ত্তনশীলের অবিচ্ছেদ প্রেমের মিলন কোথায়! এখানে সুর্‌কিতে ইটেতে, ধূলিতে নাসারন্ধে, গাড়িতে ঘোড়াতে হঠ-যোগ চলিতেছে। এখানে চারিদিকে দেয়ালের সহিত দেয়ালের, দরজার সহিত হুডকার, কড়ির সহিত বরগার চাপানের সহিত বোতামের আঁটাআঁটি মিলন।

 পাঠকেরা বোধ করি বুঝিতে পারিয়াছেন, এতদিন সরেজমিনে লেখা চলিতেছিল—সরে-জমিনে না হউক্ সরে-জলে বটে—এখন আমরা ডাঙার ধন ডাঙায় ফিরিয়া আসিয়াছি। এখন সেখানকার কথা এখানে পূর্ব্বেকার কথা পরে লিখিতে হইতেছে—সুতরাং এখন যাহা লিখিব তাহার ভুলচুকের জন্য দায়ী হইতে পারিব না।