পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
নানা কথা
২১

জাগতে পায় না। যতটা ব্যাপ্ত হব ততটা অধিকার করব, এর উল্টোটাই ঠিক। অর্থাৎ যতটা ব্যাপ্ত হবে তুমি ততই অধিকৃত হবে। কিন্তু চারদিক থেকে আপনাকে প্রত্যাহার ক’রে যখন বহ্নিশিখার মতো স্বতন্ত্র দীপ্তি পাবে তখন তোমার সেই তেজস্বী স্বাতন্ত্রের জ্যোতিতে চারিদিক উজ্জ্বলরূপে অধিকার করতে পারবে।


 ভারতবর্ষীয় সাধনার চরম লক্ষ্য সংহতি অর্থাং অধ্যাত্মযোগ। প্রাণশক্তি, মানসশক্তি, অধ্যাত্মশক্তিকে সংহত করতে পারলে তবেই অন্তরকে বাহিরকে জয় করা যায়।


 আমার কোনো বন্ধু লিখেছেন অতীতকাল অমরাবতী। অতীতে অমৃত আছে। অতীত সংক্ষিপ্তি। বর্ত্তমান কেবল অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র। মুহূর্ত্ত, অতীতকালে সেই মুহূর্ত্তরাশি সংহত হয়ে যায়। বর্তমান ত্রিশটা পৃথক দিন, অতীত একটা সমগ্র মাস। যাকে প্রত্যেক বর্ত্তমান মুহূর্তে দেখি আমরা প্রতিক্ষণে তার মৃত্যুই দেখতে পাই, যাকে অতীতে দেখি তার অমরতা দেখতে পাই।


 যখন গড়তে আরম্ভ করি তখনই প্রতিমা চোখের সম্মুখে জেগে থাকে, যখন শেষ ক’রে ফেলি তখন দেখি তা নিঃশেষ হয়ে গেছে। সুদূর লক্ষ্যাভিমুখে যখন যাত্রা আরম্ভ করি তখন লক্ষ্যের প্রতি এত টান যে লক্ষ্য যেন প্রত্যক্ষ, আর পথপ্রান্তে যখন যাত্রা শেষ করি তখন পথের প্রতি এত মায়া যে লক্ষ্য আর মনে পড়ে না। যাকে আশা করি তাকে যতখানি পাই আশা পূর্ণ হোলে তাকে আর ততখানি পাইনে। অর্থাৎ চাইলে যতখানি পাই পেলে ততখানি পাইনে।


 আসল কথা শেষ মানুষের হাতে নেই।‘শেষ হোলো’ ব’লে যে আমরা