পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ছােটোনাগপুর
২৩

দূরের পাহাড়গুলি ঘন নীল, যেন আকাশের নীল মেঘ খেলা করিতে আসিয়া পৃথিবীতে ধরা পড়িয়াছে; আকাশে উড়িবার জন্য যেন পাখা তুলিয়াছে কিন্তু বাঁধা আছে বলিয়া উড়িতে পারিতেছে না; আকাশ হইতে তাহার স্বজাতীয় মেঘেরা আসিয়া তাহার সঙ্গে কোলাকুলি করিয়া যাইতেছে। ঐ দেখো, পাথরের মতো কালো, ঝাঁক্‌ড়া চুলের ঝুঁটি বাঁধা মানুষ হাতে একগাছা লাঠি লইয়া দাঁড়াইয়া। দুটো মহিষের ঘাড়ে একটা লাঙল জোড়া, এখনো চাষ আরম্ভ হয়নি, তাহারা স্থির হইয়া রেলগাড়ির দিকে তাকাইয়া আছে। মাঝে মাঝে এক-একটা জায়গা ঘৃতকুমারীর বেড়া দিয়া ঘেরা, পরিষ্কার, তক্‌তক্ করিতেছে, মাঝখানে একটি বাঁধানো ইঁদারা। চারিদিক বড়ো শুষ্ক দেখাইতেছে। পাত্‌লা লম্বা শুক্‌নো শাদা ঘাসগুলো কেমন যেন পাকাচুলের মতো। বেঁটে বেঁটে পত্রহীন গুল্মগুলি শুকাইয়া বাঁকিয়া কালো হইয়া গেছে। দূরে দূরে এক-একটা তালগাছ ছোট্ট মাথা ও একখানি দীর্ঘ পা লইয়া দাঁড়াইয়া। মাঝে মাঝে একেকটা অশথ গাছ আমগাছও দেখা যায়। শুষ্কক্ষেত্রের মধ্যে একটিমাত্র পুরাতন কুটীরের চালশূন্য ভাঙা ভিত্তি নিজের ছায়ার দিকে তাকাইয়া আছে। কাছে একটা মস্ত গাছের দগ্ধ গ^^ড়ির খানিকটা।

 সকালে ছয়টার সময় গিরিশিষ্টেশনে গিয়া পৌঁছিলাম। আর রেলগাড়ি নাই। এখান হইতে ডাকগাড়িতে যাইতে হইবে। ডাকগাড়ি মানুষে টানিয়া লইয়া যায়। এ’কে কি আর গাড়ি বলে? চারটে চাকার উপর একটা ছোটো খাঁচা।

 সর্ব্বপ্রথমে গিরিধি ডাকবাংলায় গিয়া স্নানাহার করিয়া লওয়া গেল। ডাকবাংলার যতদুরে চাই ঘাসের চিহ্ন নাই। মাঝে মাঝে গোটাকতক গাছ। চারিদিকে যেন রাঙামাটির ঢেউ। একটা মোগা টাটু ঘোড়া গাছের তলায় বাঁধা, চারিদিকে চাহিয়া কী যে