পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৪৪
বিচিত্র প্রবন্ধ

 রাণী দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া কহিলেন— আর হইবে না? বলো কি, আজ বারো বৎসর হইয়া গেল!

 রাজা জিজ্ঞাসা করিলেন—মেয়ের বিবাহ দাও নাই?

 রাণী কহিলেন—তুমি ঘরে নাই উহার বিবাহ কে দেয়? আমি কি নিজে পাত্র খুঁজিতে বাহির হইব?

 রাজা শুনিয়া হঠাৎ ভারি শশব্যস্ত হইয়া উঠিয়া বলিলেন-রোসো, আমি কাল সকালে উঠিয়া রাজদ্বারে যাহার মুখ দেখিব তাহারই সহিত উহার বিবাহ দিয়া দিব।

 রাজকন্যা চামর করিতে লাগিলেন। তাঁহার হাতের বালাতে চুড়িতে ঠুংঠাং শব্দ হইতে লাগিল। রাজার আহার হইয়া গেল।

 পরদিন ঘুম হইতে উঠিয়। বাহিরে আসিয়া রাজা দেখিলেন একটি ব্রাহ্মণের ছেলে রাজবাড়ির বাহিরে জঙ্গল হইতে শুক্‌না কাঠ সংগ্রহ করিতেছে। তাহার বয়স বছর সাত আট হইবে।

 রাজা বলিলেন, ইহারই সহিত আমার মেয়ের বিবাহ দিব। রাজার হুকুম কে লঙ্ঘন করিতে পারে! তখনি ছেলেটিকে ধরিয়া তাহারি, সহিত রাজকন্যার মালা বদল করিয়া দেওয়া হইল।

 আমি এই জায়গাটাতে দিদিমার খুব কাছে ঘেঁষিয়া গিয়া নিরতিশয় ঔৎসুক্যের সহিত জিজ্ঞাসা করিলাম তার পরে? নিজেকে সেই সাত আট বৎসরের সৌভাগ্যবান্ কাঠকুড়নে ব্রাহ্মণের ছেলের স্থলাভিষিক্ত করিতে কি একটুখানি ইচ্ছা যায় নাই? যখন সেই রাত্রে ঝুপ্‌ঝুপ্‌ বৃষ্টি পড়িতেছিল, মিট্‌মিট্‌ করিয়া প্রদীপ জ্বলিতেছিল এবং গুন্‌গুন্ স্বরে দিদিমা মশারির মধ্যে গল্প বলিতেছিলেন, তখন কি বালকহৃদয়ের বিশ্বাসপরায়ণ রহস্যময় অনাবিষ্কৃত এক ক্ষুদ্র প্রান্তে এমন একটি সম্ভবপর ছবি জাগিয়া উঠে নাই যে, সে-ও একদিন সকাল বেলায় কোথায় এক রাজার দেশে রাজার দরজায় কাঠ কুড়াইতেছে, হঠাৎ একটি সোনার