পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পনেরো-আনা
৮১

পনেরাে-আনা।


যে লোক ধনী, ঘরের চেয়ে তাহার বাগান বড় হইয়া থাকে। ঘর অত্যাবশ্যক; বাগান অতিরিক্ত—না হইলেও চলে। সম্পদের উদারতা অনাবশ্যকেই আপনাকে সপ্রমাণ করে। ছাগলের যতটুকু শিং আছে, তাহাতে তাহার কাজ চলিয়া যায়, কিন্তু হরিণের শিঙের পনেরো আনা অনাবশ্যকতা দেখিয়া আমরা মুগ্ধ হইয়া থাকি। ময়ুরের লেজ যে কেবল রঙচঙে জিতিয়াছে, তাহা নহে—তাহার বাহুল্যগৌরবে শালিকখঞ্জন ফিঙার পুচ্ছ লজ্জায় অহরহ অস্থির।

 যে মানুষ আপনার জীবনকে নিঃশেষে অত্যাবশ্যক করিয়া তুলিয়াছে, সে ব্যক্তি আদর্শপুরুষ সন্দেহ নাই, কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে তাহার আদর্শ অধিক লোকে অনুসরণ করে না;–যদি করিত তবে মনুষ্যসমাজ এমন একটি ফলের মতো হইয়া উঠিত, যাহার বীচিই সমস্তটা, শাঁস একেবারেই নাই। কেবলই যে লোক উপকার করে, তাহাকে ভালো না বলিয়া থাকিবার জো নাই, কিন্তু যে লোকটা বাহুল্য, মানুষ তাহাকে ভালোবাসে।

 কারণ, বাহুল্যমানুষটি সর্ব্বতোভাবেই আপনাকে দিতে পারে। পৃথিবীর উপকারী মানুষ কেবল উপকারের সঙ্কীর্ণ দিক্ দিয়াই আমাদের একটা অংশকে স্পর্শ করে;–সে আপনার উপকারিতার মহৎ প্রাচীরের দ্বারা আর-সকল দিকেই ঘেরা; কেবল একটি দরজা খোলা, সেখানে আমরা হাত পাতি, সে দান করে। আর, আমাদের বাহুল্যলোকটি কোনো কাজের নহে, তাই তাহার কোনো প্রাচীর নাই। সে আমাদের