পাতা:বিচিন্তা - রাজশেখর বসু.pdf/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৩
জাতিচরিত্র

পুলিসের সঙ্গে লড়াই, ট্রাম-বাস পোড়ানো, বোমা ছোড়া, দোকান লুঠ, ইত্যাদি কর্মের জন্য বীরপুরুষ ঢের আছে তা ঠিক। কিন্তু আজ যদি কোনও বক্তিয়ার খিলজি সতরো বা সাত হাজার সৈন্য নিয়ে দেশ আক্রমণ করে তবে ক জন বাঙালী তাদের বাধা দেবে? যাদের প্ররোচনায় আমাদের ছেলেরা ‘চলবে না চলবে না, মানতে হবে মানতে হবে’ বলে গর্জন করে, সেই অন্তরালস্থ নেতারা তখন কি করবে? শত্রুর দলে যোগ দেবে না তো? তখন কি শুধুই গোর্খা-শিখ-গাঢ়োআলী পল্টন আমাদের হয়ে লড়বে আর আমরা ঘরের দরজা বন্ধ করে দুর্গানাম জপ করব?

 হুজুগে মেতে বা দেশদ্রোহীর প্ররোচনায় গুণ্ডামি করা আর দেশরক্ষার জন্য যুদ্ধ করা এক নয়। মাতৃভূমি রক্ষার জন্য শুধু সাহস নয়, শিক্ষাও আবশ্যক। দেশরক্ষার জন্য যে সৈন্যবাহিনী গঠিত হচ্ছে তাতে যদি দলে দলে বাঙালীর ছেলে সাগ্রহে যোগ দেয় তবেই তাদের এবং তাদের পিতামাতার সাহস আর দেশপ্রেম প্রমাণিত হবে। এককালে ইংরেজ আমাদের রক্ষা করত, এখন অবাঙালী ভারতবাসী রক্ষা করবে―এ কথা ভাবতেও লজ্জা হওয়া উচিত।

 দেশের উপর একটা প্রচ্ছন্ন আতঙ্কের জাল ছড়িয়ে আছে, প্রজা বা শাসক কেউ তা থেকে মুক্ত নয়। শিক্ষকরা ছাত্রদের ভয় করেন, পরীক্ষার সময় যারা নকল করে তাদের বাধা দিলে প্রাণহানির সম্ভাবনা আছে। পিতামাতা সন্তানকে শাসন করতে সাহস করেন না, পাছে সে আত্মহত্যা করে অথবা তার সঙ্গীরা সদলে এসে প্রতিশোধ নেয়। ব্রিটিশ আমলে পুলিস বেপরোয়া ছিল, তার এই ভরসা ছিল যে প্রবলপ্রতাপ মনিব পিছনে আছেন। কিন্তু এখন পুলিস দ্বিধায় পড়েছে, কোন্ ক্ষেত্রে কতটা বলপ্রয়োগ চলবে তা তার বর্তমান মনিবরা স্থির করতে পারেন না। চোর ডাকাত প্রভৃতি