পাতা:বিচিন্তা - রাজশেখর বসু.pdf/১৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২১
সমদৃষ্টি

বংশপ্রীতি অসাধারণ ছিল, ঊর্ধ্বতন চতুর্দশ পুরুষ পর্যন্ত শাখাপ্রশাখায় বিস্তৃত বংশবিবরণ ছাপিয়েছিলেন। সেই চটি বই একখানা আমাকে দিয়ে বললেন, মাঝে মাঝে পড়বে, হিস্টরির চাইতে কম দরকারী নয়।

 বড় হয়ে শুনলাম, সাত পুরুষ পর্যন্ত সপিণ্ড, তার পর আরও সাত পুরুষ পর্যন্ত সমানোদক। অর্থাৎ পরলোকস্থ ঊর্ধ্বতন সাত পুরুষের অন্তর্গত সকলকে মাঝে মাঝে পিণ্ড দিতে হয়, আরও সাত পুরুষকে শুধু জল দিয়ে তর্পণ করলেই চলে। আরও আগে যাঁরা ছিলেন তাঁদের কিছু না দিলেও দোষ হয় না।

 যাঁদের চোখে দেখেছি, স্নেহ পেয়েছি, এবং তাঁদের মুখে যাঁদের বিবরণ শুনেছি তাঁরাই আমার সপ্তম পুরুষান্তর্গত জ্ঞাতি। তাঁরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে আমার জ্ঞাত শ্রদ্ধাভাজন আপন জন, সেজন্য সপিণ্ড। পূর্বে যে সাত পুরুষ ছিলেন তাঁদের নাম ছাড়া হয়তো কিছুই জানা নেই, তাঁরা আমার সমানোদক। তাঁদের ঊর্ধ্বে যাঁরা ছিলেন তাঁরা শুধুই জ্ঞাতি। আমাদের ধর্মশাস্ত্রে এইভাবে আত্মবর্গের বিভাগ করা হয়েছে। পিতৃকুল মাতৃকুল দুই থেকে মানুষের উৎপত্তি, কিন্তু অধিকাংশ সমাজে মানুষ পিতৃকুলে বাস করে, সেজন্য বংশগণনায় পিতৃকুলই ধরা হয়। আধুনিক বিজ্ঞানীরা পুংসম্পর্ক বাদ দিয়েও কোনও কোনও স্ত্রীপ্রাণীর গর্ভাধান করতে পেরেছেন। হয়তো ভবিষ্যতে মানুষের পক্ষেও মাতাই মুখ্য এবং পিতা গৌণ ও ক্ষেত্রবিশেষে অনাবশ্যক গণ্য হবেন।

 উৎপত্তিকালে আমরা পিতা মাতা থেকে যেসব দৈহিক উপাদান পাই তার বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা ক্রোমোসোম, জীন, বা যাই হক, চলিত কথায় তাকেই রক্তের সম্পর্ক বলা হয়। পিতা মাতা প্রত্যেকের কাছ থেকে আমরা রক্ত-সম্পর্কের অর্ধেক অংশ পাই। সিকি অংশ