আমরা অপেক্ষাকৃত অহিংস্র মৃদুস্বভাব ও পরমতসহিষ্ণু। প্রাচীন মিশরীয়গণ যেমন কয়েকটি প্রাণীকে দেবতুল্য গণ্য করত, হিন্দুও গরুকে সেইরকম মর্যাদা দেয়। পাশ্চাত্ত্য দেশে অকর্মণ্য ও মরণাপন্ন পালিত জন্তুকে মেরে ফেলা হয়, এদেশে সে প্রথা নেই। হিন্দুর মৃগয়াপ্রবৃত্তিও কম। এখনকার তুলনায় প্রাচীন ভারতে আমিষাহার বেশী প্রচলিত ছিল, কিন্তু বৌদ্ধ আর জৈন ধর্মের প্রভাবে তা কমে গেছে। মহাভারতে মনুর উক্তি আছে―যজ্ঞাদি কর্মে এবং শ্রাদ্ধে পিতৃগণের উদ্দেশে যে মন্ত্রপূত সংস্কৃত মাংস নিবেদিত হয় তা পবিত্র হবিঃস্বরূপ, তা ভিন্ন অন্য মাংস বৃথামাংস এবং অভক্ষ্য। সম্রাট অশোক প্রাণিহত্যা নিয়ন্ত্রিত করেছিলেন। বর্তমান কালে ভারতবর্ষে যত নিরামিষাশী আছে অন্য দেশে তত নেই, তবে স্বাধীনতা লাভের পর এদেশে যে পাশ্চাত্ত্য বিলাসিতার স্রোত এসেছে তার ফলে নিরামিষাশী সম্প্রদায়ের মধ্যেও আমিষাহার প্রচলিত হচ্ছে।
উক্ত বৈশিষ্ট্য সত্ত্বেও বলা চলে না যে অন্যদেশবাসীর তুলনায় ভারতবাসী অধিকতর সমদর্শী। এদেশে অস্পৃশ্যতা আছে, উচ্চ বর্ণের অভিমান এবং নীচ বর্ণের প্রতি ঘৃণা বা অবজ্ঞা আছে। যার ধর্ম ভাষা আকৃতি পরিচ্ছদ খাদ্য ইত্যাদি ভিন্নপ্রকার তাকে আমরা আপন জন মনে করতে পারি না। ইংরেজীতে একটি ব্যঙ্গোক্তি আছে―সব মানুষ সমান, কিন্তু কেউ কেউ বেশী সমান। আমাদের সমদর্শিতা সম্বন্ধেও এই কথা বলা চলে।
ভারতবর্ষে ধর্মপ্রচারক সাধু অনেক ছিলেন, এখনও আছেন, কিন্তু ভক্তি আর অধ্যাত্মবিদ্যার প্রচার যত হয়েছে জনহিতব্রত আর সমদর্শিতার প্রচার তেমন হয় নি। আশার কথা, ভারত সরকার এদিকে মন দিয়েছেন এবং শিক্ষিত লোকের মধ্যে এ বিষয়ে উৎসাহ দেখা দিয়েছে।