পাতা:বিচিন্তা - রাজশেখর বসু.pdf/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 বিচিন্তা
১৫৮

হিন্দী যদি ভবিষ্যতে রাষ্ট্রভাষা হয়, বঙ্গ-বিহার যদি কোনও কালে যুক্ত হয়ে যায়, তবে অন্য লাভ ক্ষতি যাই হক বাংলা আর সাহিত্যের হানি হবার সম্ভাবনা নেই। বঙ্গ-বিহার বা কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তারা যদি উৎকট হিন্দীপ্রেমের বশে বাংলা ভাষার উপর উপদ্রব শুরু করেন তবে বাঙালী কি এতই দুর্বল যে তা রােধ করতে পারবে না?

 বাঙালী লেখকরা বহু কাল ধরে ইংরেজী ভাবরাশি আত্মসাৎ করেছেন, তাঁর ফলে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ ও পরিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু তার জাতিনাশ হয় নি। সম্প্রতি বাংলা সাহিত্যে একটি অদ্ভুত সন্ধিক্ষণ দেখা দিয়েছে। নবীন বাঙালীর ইংরেজী জ্ঞান পূর্বের তুলনায় কমে যাচ্ছে। শুনতে পাই অনেক গ্র্যাজুয়েটও ইংরেজী গল্পের বই পড়ে বুঝতে পারেন না সেজন্য আজকাল অনুবাদ গ্রন্থের এত প্রচলন হয়েছে। শুধু ইংরেজী গ্রন্থ নয়, চিরায়ত বা ক্লাসিক বাংলা রচনাও ক্রমশ অবােধ্য হয়ে পড়েছে। যুবক ও মধ্যবয়স্ক অনেক শিক্ষিত লােককে বলতে শুনেছি—কপালকুণ্ডলা বুঝতে পারি না; আর কালীসিংহের মহাভারত? ওরে বাপ রে! হয়তাে কিছু কাল পরে রবীন্দ্রনাথ আর শরৎচন্দ্রও অবােধ্য হয়ে পড়বেন।

 কিন্তু ইংরেজী ভাষায় দখল যতই কমুক, ইংরেজী এখনও বাংলা ভাষার গুরুস্থানীয়, বরং গুরুভক্তি আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে এবং তার সঙ্গে মােহ এসেছে। বহু প্রচলিত বাংলা বাক্যরীতি স্থানে ইংরেজী রীতি ক্রমশ প্রকট হচ্ছে। উপযুক্ত বাংলা শব্দ থাকলেও ইংরেজীর মাছিমারা নকলে নূতন শব্দ চালানাে হচ্ছে। বাংলা ভাষার উপর সংস্কৃত ব্যাকরণের যেটুকু শাসন ছিল তা লােপ পাচ্ছে, তার ফলে ভাষা উচ্ছৃঙ্খল হচ্ছে। বঙ্কিমচন্দ্রের ভাষা যেমন নবীন শিক্ষিত জনের অবােধ্য, অনেক আধুনিক