পাতা:বিচিন্তা - রাজশেখর বসু.pdf/১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ইহকাল পরকাল

আমার চেতনা বা ব্যক্তিত্ববোধ থাকে কিনা তা বলা আমার সাধ্য নয়।

 এই পর্যন্ত মেনে নিতে বিশেষ বাধা হয় না, কিন্তু পরে যা বলছি তা বিভিন্ন পণ্ডিতের অনুমান বা কল্পনা মাত্র। সিনেমার ছবি একবার দেখানো হলেই তার বিনাশ হয় না; চিত্রপ্রবাহরূপ যে ঘটনার একবার অবসান হয়েছে আবার তা দেখানো যেতে পারে, কারণ, তার মূলীভূত ফিল্মের তো বিনাশ হয় নি। আমাদের জীবনরূপ চলচ্চিত্রের মূলস্বরূপ কি কিছু নেই? বিজ্ঞানী বলেন, আমরা যে লাল নীল প্রভৃতি রং দেখি তা দর্শনেন্দ্রিয়ের বিভ্রম মাত্র, আলোকতরঙ্গের দৈর্ঘ্যের ভেদই আমাদের দৃষ্টিতে বিভিন্ন রং বলে মনে হয়। সেই রকম বলা যেতে পারে যে মহাকাল একটি অবিচ্ছিন্ন প্রবাহ, আমাদের মনের গুণে (বা দোষে)ই ভূত-ভবিষ্যৎ-বর্তমানের ভেদজ্ঞান হয়। যা বর্তমান তারই অস্তিত্ব আছে, যা অতীত আর ভবিষ্যৎ তার অস্তিত্ব এখন নেই—এমন মনে করব কেন? সমস্তই সিনেমা-ফিল্মের রীলের ন্যায় যুগপৎ বিদ্যমান, সমস্তই নিত্য; আমার মনের শক্তি সীমাবদ্ধ তাই কালকে খণ্ড খণ্ড করে উপলব্ধি করি। বহু পণ্ডিতের মতে দেশ ও কাল illusion বা অধ্যাস বা মায়া মাত্র।

 একদেশসম্বন্ধ ছিন্ন হলে আবার তা স্থাপিত হতে পারে, সেইরকম এককালসম্বন্ধ কি পুনস্থাপিত হতে পারে না? কালসমুদ্রে বিয়োজিত দুই কাষ্ঠের পুনর্মিলন কি অসম্ভব? যদি অতীত বর্তমান আর ভবিষ্যৎ সমস্তই একসঙ্গে বিদ্যমান থাকে তবে আপাতদৃষ্টিতে কালব্যবধান যতই থাকুক, এক ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে আর এক ঘটনাপ্রবাহের পুনর্বার সংযোগ অসাধ্য নাও হতে পারে।

 পনর-বিশ বৎসর পূর্বে J. W. Dunne কয়েকটি গ্রন্থ লেখেন—