বর্জনীয়। এই দু রকম গোঁড়ামির ঊর্ধ্বে উঠে উদার দৃষ্টিতে কি করে দু সাহিত্য রচনা করা যায় তা রবীন্দ্রনাথ দেখিয়েছেন। তাঁকে বাঁ দিক আর ডান দিক থেকে বিরুদ্ধ সমালোচনা শুনতে হয়েছে, কারণ সকল পাঠকের সাহিত্যিক উদার দৃষ্টি নেই।
ইওরোপীয় রাজনীতিকদের মুখে এখনও আমরা শুনতে পাই যে Christian ideal বা খ্রীষ্টীয় আদর্শ না মানলে কোনও রাষ্ট্রের নিস্তার নেই। খ্রীষ্টধর্ম ছাড়াও যে মহৎ আদর্শ থাকতে পারে তা তাঁরা জানেন না, জানবার চেষ্টাও করেন না। সেই রকম এদেশের অনেকে মনে করেন যে সনাতনী বা ইসলামী আদর্শ নিয়েই সাহিত্য রচনা করতে হবে।
রবীন্দ্রনাথ পুরাণাদি প্রাচীন ঐতিহ্যকে উপযুক্ত স্থান দিয়েও সাহিত্যকে সাম্প্রদায়িক ধর্মের উপর টেনে এনেছেন এবং দেখিয়েছেন যে উৎকৃষ্ট ইওরোপীয় সাহিত্যের ন্যায় বাংলা সাহিত্যকেও সর্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক করা যায়। এই লক্ষণের ফলেই রবীন্দ্রসাহিত্য অনেক অহিন্দু পাঠককে তৃপ্তি দিয়েছে। আশা করা যায়, এই পথে অগ্রসর হয়েই ভবিষ্যৎ বাংলা সাহিত্য সর্ব সম্প্রদায়ের গ্রহণীয় হতে পারবে।
রবীন্দ্রনাথ মনে প্রাণে আধুনিক ও যুক্তিবাদী, তথাপি তাঁর কাব্য নাটক আর গল্পে এদেশের প্রাচীন চিন্তাধারার সঙ্গে যোগসূত্র পূর্ণমাত্রায় বজায় রেখেছেন। তিনি লোকব্যবহারেও যে অনুরূপ যোগসূত্র রেখেছিলেন তার উল্লেখ করে আমার বক্তব্য শেষ করব। রবীন্দ্রনাথ কীর্তি আর আভিজাত্যের গণ্ডি দিয়ে নিজেকে ঘিরে রাখেন নি, কোনও আলাপপ্রার্থীকে প্রত্যাখ্যান করেন নি। তাঁর সাহিত্যের যাঁরা চর্চা করেন, দেশের জনসমষ্টির তুলনায় তাদের সংখ্যা খুব কম; তথাপি শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিশেষে অগণিত লোক তাঁর সঙ্গে