পাতা:বিচিন্তা - রাজশেখর বসু.pdf/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিচিন্তা
১৬

ভারতের সংবিধানে যে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র স্বীকৃত হয়েছে বিলাত তেমন নয়। বিলাতের রাজাই চার্চ অভ ইংলাণ্ডের প্রধান, তাঁর অন্যতম উপাধি Defender of the Taith। পাকিস্তানী নেতারা যেমন রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে ইসলামী নীতির প্রতিষ্ঠান, ব্রিটিশ নেতারাও তেমনি বলে থাকেন যে Christian ideal না মানলে রাষ্ট্রের মঙ্গল নেই। বিলাতী রেডিওতে প্রত্যহ যে ধর্মকথা প্রচারিত হয় তা প্রধানত প্রোটেস্টাণ্ট খ্রীষ্টধর্ম, ক্যাথলিক প্রভৃতি সম্প্রদায় বিশেষ প্রশ্রয় পান না। কয়েক বৎসর থেকে নাস্তিক, অজ্ঞাবাদী (agnostic) ও যুক্তিবাদী (rationalist) সম্প্রদায় তর্ক করছেন যে ব্রিটিশ প্রজা কেবল প্রোটেস্টাণ্ট নয়, কেবল খ্রীষ্টানও নয়। বিশ্বাসী অবিশ্বাসী নানা সম্প্রদায় বিলাতে বাস করে, তারা নিজ নিজ মত প্রচারের অধিকার পাবে না কেন? প্রবল আন্দোলনের ফলে কর্তারা। নিতান্ত অনিচ্ছায় অখ্রীষ্টান যুক্তিবাদী সম্প্রদায়কেও কিছু কিছু প্রচারের অধিকার সম্প্রতি দিয়েছেন। পাদরীরা তাতে মোটেই খুশী হন নি।

 কয়েক বৎসর পূর্বেও বিলাতে রবিবারে থিয়েটার সিনেমা বল-নাচ ফুটবল-ম্যাচ প্রভৃতি নিষিদ্ধ ছিল, পাছে ওই দিনের পবিত্রতা নষ্ট হয়। গত যুদ্ধের সময় সৈন্যদের আবদারের ফলে এই নিয়মের কড়াকড়ি এখন অনেকটা কমেছে। ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনীতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পাদরী বাহাল থাকেন, সপ্তাহে একদিন উপাসনায় যোগ দেওয়া ও ধর্মকথা শোনা সৈন্যদের অবশ্যকর্তব্য। অবিশ্বাসী সৈন্যরা নিষ্কৃতি পেতে পারে, কিন্তু তাতে অনেক বাধা। সম্প্রতি বিলাতের সমস্ত বিদ্যালয়ে নিয়মিত ধর্মশিক্ষার ব্যবস্থা হয়েছে। যে শিক্ষক খ্রীষ্টধর্মে নিষ্ঠাহীন অথবা যিনি নিষ্ঠার ভান করতে পারেন না তাঁর চাকরির আশা অল্প।