পাতা:বিচিন্তা - রাজশেখর বসু.pdf/৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৭
ভাষার মুদ্রাদোষ ও বিকার

করেন। ‘সন্দেহ নাই’—এই সরল প্রয়োগ প্রায় উঠে গেছে, তার বদলে চলছে—‘সন্দেহের অবকাশ নাই’। ‘চা পান’ বা ‘চা খাওয়া’ চলে না, ‘চা পর্ব’ লেখা হয়। ‘মিষ্টান্ন খাইলাম’ স্থানে ‘মিষ্টান্নের সদ্‌ব্যবহার করা গেল’। মাঝে মাঝে অলংকার হিসাবে এরকন প্রয়োগ সার্থক হতে পারে, কিন্তু যদি বার বার দেখা যায় তবে তা মুদ্রাদোষ।

 শব্দের অপচয় করলে ভাষা সমৃদ্ধ হয় না, দুর্বল হয়। যেখানে ‘ব্যর্থ হইবে’ লিখলে চলে সেখানে দেখা যায় ‘ব্যর্থতায় পর্যবসিত হইবে’। অনেকে ‘দিলেন’ স্থানে ‘প্রদান করিলেন’, ‘যোগ দিলেন’ স্থানে ‘অংশগ্রহণ করিলেন’ বা যোগদান করিলেন’, ‘গেলেন’ স্থানে ‘গমন করিলেন’ লেখেন। ‘হিন্দীভাষী’ লিখলেই অর্থ প্রকাশ পায়, অথচ লেখা হয় ‘হিন্দীভাষাভাষী’। ‘কাজের জন্য (বা কর্মসূত্রে) বিদেশে গিয়াছেন’— এই সরল বাক্যের স্থানে দুরূহ অশুদ্ধ প্রয়োগ দেখা যায়—‘কর্মব্যপদেশে বিদেশে গিয়াছেন’। বাপদেশের মানে ছল বা ছুতা। ‘পূর্বেই ভাবা উচিত ছিল’ স্থানে লেখা হয়—‘পূর্বাহ্ণেই···’। পূর্বাহ্ণের একমাত্র অর্থ সকালবেলা।

 বাংলা একটা স্বাধীন ভাষা, তার নিজের পায়ে দাঁড়াবার শক্তি আছে, সংস্কৃতের বশে চলবার কোনও দরকার নেই—এই কথা অনেকে বলে থাকেন। অথচ তাঁদের মধ্যেও প্রচ্ছন্ন বিকৃত সংস্কৃতপ্রীতি দেখা যায়। বাংলা ‘চলন্ত’ শব্দ আছে, তবু তাঁরা সংস্কৃত মনে করে অশুদ্ধ ‘চলমান’ লেখেন, বাংলা ‘আগুয়ান’ স্থানে অশুদ্ধ ‘অগ্রসরমান’ লেখেন, সুপ্রচলিত ‘পাহারা’ স্থানে ‘প্রহরা’ লেখেন। বাকীর সংস্কৃত বক্রী নয়, পাঁঠার সংস্কৃত পণ্টক নয়, পাহারার সংস্কৃতও প্রহরা নয়।

 অনেক লেখকের শব্দবিশেষের উপর ঝোঁক দেখা যায়, তাঁরা তাঁদের প্রিয় শব্দ বার বার প্রয়োগ করেন। একজন গল্পকারের