পাতা:বিচিন্তা - রাজশেখর বসু.pdf/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৫
বাঙালীর হিন্দীচর্চা

থেকেও বিস্তর শব্দ হিন্দীতে যাচ্ছে। বাংলার তুলনায় ইংরেজী ভাষার সমৃদ্ধি খুব বেশী, সেই কারণেই বাংলার উপর তার অসামান্য প্রভাব। হিন্দীর সে সমৃদ্ধি নেই, সেজন্য তার প্রভাব কখনও বেশী হবে না―রাজনীতিক মর্যাদা যতই থাকুক।

 পঞ্চাশ ষাট বৎসর পূর্ব পর্যন্ত এদেশে কেবল পাঠশালায় আর স্কুলের নিম্ন শ্রেণীতে বাংলা পড়ানো হ’ত। তখনকার শিক্ষাবিধাতারা মনে করতেন, বাংলা তো আপনিই শেখা যায়, তার জন্য বেশী কিছু করতে হবে কেন। এই উপেক্ষা সত্ত্বেও সেকালের বাঙালী লেখক মাতৃভাষার উন্নতি করেছেন, উৎকৃষ্ট সাহিত্য রচনা করেছেন। তাঁদের কীর্তির জন্যই পরবর্তী কালে বাংলা সাহিত্য কলেজেও শিক্ষণীয় হয়েছে। এখন বাংলা চর্চা করেই এম. এ., পি-এচ. ডি. উপাধি পাওয়া যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থান পাওয়ায় বাংলা ভাষা জাতে উঠেছে, তার উৎপত্তি সম্বন্ধে অনেক গবেষণা হয়েছে, প্রাচীন বাংলা সাহিত্য পাঠ্যরূপে সমাদর পেয়েছে। কিন্তু কলেজী শিক্ষার গুণে বা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেষ্টার ফলে প্রত্যক্ষভাবে বাংলা ভাষার বা সাহিত্যের কোনও উন্নতি হয়েছে এমন বলা যায় না। সেকালের লেখকরা পাঠশালায় বা স্কুলের নিম্ন শ্রেণীতেই বাংলা শিখেছিলেন। তাঁদের মধ্যে যাঁরা শীর্ষস্থানীয় তাঁরা ভাষার শুদ্ধি ও সৌষ্ঠবের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতেন এবং নূতন লেখকদের নিয়ন্ত্রিত করতেন। এখন অসংখ্য লেখক, তাঁদের অনেকে কলেজে বাংলা পড়েছেন। এখন রচনার বৈচিত্র্য ও পরিমাণ বেড়ে গেছে, আধুনিক প্রয়োজনে ভাষা নব নব ভাবের ধারক হয়েছে, তার প্রকাশ শক্তিও প্রসারিত হয়েছে। কিন্তু সেকালে যে সতর্কতা ছিল, ইংলাণ্ড ফ্রান্স প্রভৃতি দেশে ভাষার উপর যে শাসন আছে, আধুনিক বাংলা সাহিত্যে তার একান্ত অভাব দেখা যায়।