পাতা:বিচিন্তা - রাজশেখর বসু.pdf/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিচিন্তা
৭০

মুসলমান খ্রীষ্টান এবং বহু আদিম জাতির ধর্মও তাকে প্রভাবিত করেছে। হিন্দুর রক্ত, সংস্কার, ধর্ম কিছুই অবিমিশ্র নয়। ভারতে উদ্ভূত অতি জটিল হিন্দু সংস্কৃতির সঙ্গে গত দেড় শ বৎসরে ইওরোপীয় সংস্কৃতিরও যোগ হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও হবে।

 স্বধর্মনিষ্ঠার সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে স্বধর্মচ্যুতির অকারণ আশঙ্কা জড়িত থাকে। গোঁড়া হিন্দু ভক্ষ্য-অভক্ষ্য, স্পৃশ্য-অস্পৃশ্য, কৃত্য-অকৃত্য, কাল-অকাল প্রভৃতি বিচার করে সাবধানে জীবনযাপন করে। মিথ্যা কথা, প্রতারণা বা পরস্বাপহরণে ধর্মচ্যুতি হয় না, কিন্তু গ্রহণের সময় খেলে বা বিধবাকে গহনা পরতে দিলে হয়। সাধুতার চেয়ে লোকাচার বড় এই ধারণা সকল ধর্মের গোঁড়া লোকের মধ্যে আছে। যারা স্মরণীয় কালের মধ্যে ধর্মান্তর নিয়েছে অথবা সমাজের এক স্তর থেকে উচ্চতর স্তরে উঠেছে তাদের মধ্যে পূর্বধর্মের ছোঁয়াচ লাগবার প্রবল আশঙ্কা দেখা যায়। পৌত্তলিকতা প্রতিরোধের জন্য মুসলমান ধর্মে যত কঠিন বিধি আছে খ্রীষ্টধর্মের কোনও শাখায় ততটা দেখা যায় না। এই সব বিধিনিষেধের আদিকারণ মুসলমান সমাজবিজ্ঞানীরা বলতে পারেন। এর মূলে এই আশঙ্কা থাকতে পারে যে পূর্বপুরুষদের উৎসববহুল সরস ধর্মের প্রতি লোকের একটা প্রচ্ছন্ন আকর্ষণ আছে, একটু অসতর্ক হলেই পতন হবে। হিন্দুর অনেক নিয়মের মূলেও হয়তো এই ধারণা আছে যে লঙ্ঘন করলেই অনার্যতার মোহময় পঙ্কে পড়তে হবে। শিক্ষিত বাঙালী খ্রীষ্টানদের মধ্যেও এই শুচিবাতিক দেখা যেত, কিন্তু এখন বোধ হয় কমে গেছে। এককালে ব্রাহ্ম সম্প্রদায়ের উপর অনেক সামাজিক নির্যাতন হয়েছে। দেশী খ্রীষ্টানদের উপর তেমন কিছু হয় নি, কারণ তাঁরা সাহেব পাদরীর আশ্রিত। অসহায় ব্রাহ্মরা আত্মরক্ষার জন্য গোঁড়া হিন্দুদের সংশ্রব যথাসম্ভব পরিহার করতেন এবং স্বধর্মচ্যুতির ভয়ে পৌত্তলিকতার সকল