পাতা:বিদায় ভোজ - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিদায় ভােজ।
২৭

 দোকানদার বলিলেন, “ও সকল সামান্য জিনিষ আমরা কিনি না। ঘড়ীটা যদি দামী হইত, তাহা হইলেও কথা ছিল। অল্পদামের পুরাতন ঘড়ী কিনিলে প্রায়ই ঠকিতে হয়।”

 বাধা দিয়া আমি বলিলাম, “না দেখিয়া ঘড়ীর নিন্দা করেন কেন? ঘড়ীটা রূপার বটে, কিন্তু কম দামের নহে। ইহা বিলাতী রদারহামের, ইহার দাম ষাইট্‌ টাকার কম নহে। যদি লওয়া হয় বলুন, নচেৎ অন্য চেষ্টা দেখি।”

 দোকানদার হাসিয়া উত্তর করিলেন, “রাগ করেন কেন মহাশয়! ষাট সত্তর টাকার ঘড়ী কি আর ঘড়ী, পাঁচশতটাকার ঘড়ী হয়, তাহা হইলে আমরা ক্রয় করিতে পারি। রদারহামই বলুন, আর যাহাই বলুন, দু-এক শতটাকার ঘড়ী আমরা কিনি না।”

 আমার কেমন ক্রোধ হইল। আমি সহ্য করিতে পারিলাম না। কর্কশ স্বরে বলিলাম, “যাহারা একটা সামান্য আংটী ক্রয় করিবার জন্য সাত দোকান ঘু্রিয়া বেড়ায়, তাহাদের মুখে অমন কথা শোভা পায় না।”

 দোকানদার আমার কথায় হাসিয়া উঠিলেন। হাসিতে হাসিতে বলিলেন, “আপনি কি মনে করিয়াছেন, এই আংটীটা সামান্য! দেখুন দেখি, এমন আংটী আপনি জীবনে আর কখন দেখিয়াছেন কি না?”

 এই বলিয়া তিনি আমার হাতে সেই আংটীটী প্রদান করিলেন। আমি দৃষ্টিগোচর করিবামাত্র চমকিত হইলাম। যাহা দেখিলাম, তাহাতে যুগপৎ আনন্দিত—বিস্মিত হইলাম! আংটীটার উপরে একটা অতি ক্ষুদ্র ঘড়ী! ঘড়ীর কাঁটাগুলি এত ক্ষুদ্র যে, চর্মচক্ষের অগোচর বলিলেও অত্যুক্তি হয় না।