পাতা:বিদ্যাসাগরচরিত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিদ্যাসাগরচরিত

অভ্যস্তরে নিত্যকাল বিরাজ করিতেছেন; সেই অন্তররাজ্যেই তাহার অস্তিত্ব; কর্মদ্বার অথবা বাক্যদ্বারা নিজেকে বাহিরে প্রকাশ করিয়া তিনি সেই অন্তররাজ্যকেই বাহিরে বিস্তার করিতেছেন।

 কার্লাইলের মতে ইহার কাপড় ঝুলাইবার আলনা বা হজম করিবার যন্ত্র নহেন,ইহারাই সজীব মনুষ্য,অর্থাৎ সেই একই কথা, ‘স জীবতি মনো যস্য মননেন হি জীবতি। অথবা, অন্য কবির ভাষায় ইহারা গতানুগতিকমাত্র নহেন ইহারা পারমার্থিক।

 আমরা স্বার্থকে যেমন সহজে এবং সুতীব্রভাবে অনুভব করি, মননজীবিগণ পরমার্থকে ঠিক তেমনি সহজে অনুভব করেন এবং তাহার দ্বারা তেমনি অনায়াসে চালিত হন। তাহাদের দ্বিতীয় জীবন, তাহীদের অন্তরতর প্রাণ যে খাদ্য চায়, যে বেদনা বোধ করে, যে আনন্দামুতে সাংসারিক ক্ষতি এবং মৃত্যুর বিরুদ্ধেও অমর হইয়া উঠে, আমাদের নিকট তাহার অস্তিত্বই নাই।

 পৃথিবীর এমন একদিন ছিল যখন সে কেবল আপনার দ্রবীভূত ধাতুপ্রস্তরময় ভূপিণ্ড লইয়া সূর্যকে প্রদক্ষিণ করিত। বহুযুগ পরে তাহার নিজের অভ্যস্তরে এক অপরূপ প্রাণশক্তির বিকাশে জীবনে এবং সৌন্দর্যে তাহার স্থলজল পরিপূর্ণ হইয়া।

 মানবসমাজেও মননশক্তিদ্বারা মনঃস্থষ্টি বহুযুগের এক বিচিত্র ব্যাপার। তাহার সৃষ্টিকার্য অনবরত চলিতেছে, কিন্তু

৫৮