পাতা:বিদ্যাসাগরচরিত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিদ্যাসাগরচরিত

দ্বিতীয় চেতনা আছে— সে চেতনার সমস্ত বেদনা আমাদের অনুভবের অতীত।

 বিদ্যাসাগর সেই দ্বিতীয় চেতনা লইয়া সংসারে জন্মগ্রহণ করাতে তাঁহার বেদনার অন্ত ছিল না। চারি দিকের অসাড়তার মধ্যে এই ব্যথিত বিশালহৃদয় কেবল নিঃসহায়ভাবে, কেবল আপনার প্রাণের জোরে, কেবল আপনার বেদনার উত্তাপে একাকী আপন কাজ করিয়া গিয়াছেন।

 সাধারণলোকের হিসাবে সে-সমস্ত কাজের কোনো প্রয়োজন ছিল না। তিনি কেবলমাত্র পাণ্ডিত্যে এবং বিদ্যালয়পাঠ্যগ্রন্থ- বিক্রয়-দ্বার ধনোপার্জনে সংসারে যথেষ্ট সম্মানপ্রতিপত্তি লাভ করিয়া যাইতে পারিতেন। কিন্তু তাহার নিজের হিসাবে এ-সমস্ত কাজের একান্ত প্রয়োজন ছিল; নতুবা তিনি যে অধিকজীবন বহন করিতেন সে জীবনের নিশ্বাসরোধ হইত;তাঁহার ধনোপার্জন ও সম্মানলাভে তাঁহাকে রক্ষা করিতে পারিত না।

 বাল্যবিধবার দুঃখে দুঃখবোধ আমাদের পক্ষে একটি ক্ষণিক ভাববাদ্রেক মাত্র। তাহাদের বেদনা আমাদের জীবনকে স্পর্শ করে না। কারণ, আমরা গতানুগতিক; যেখানে দশজনের বেদনাবোধ নাই সেখানে আমরা অচেতন। আমরা প্রকৃতরূপে প্রত্যক্ষরূপে অব্যবহিতরূপে তাহাদের বঞ্চিতজীবনের সমস্ত দুঃখ ও অবমাননাকে আপনার দুঃখ ও অবমাননা -রূপে অনুভব করিতে পারি না। কিন্তু ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে আপন অতি-

৬০