পাতা:বিদ্যাসাগরচরিত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিদ্যাসাগরচরিত

অথচ বাধা ছিল পদে পদে। তাহার মননজীবী অন্তঃকরণ তাঁহাকে প্রবল আবেগে কাজ করাইয়াছিল, কিন্তু গতজীবন বহিঃসংসার তাহাকে আশ্বাস দেয় নাই। তিনি যে শবসাধনায় প্রবৃত্ত ছিলেন, তাহার উত্তরসাধকও ছিলেন তিনি নিজে।

 আধুনিক ইংলণ্ডে বিদ্যাসাগরের ঠিক উপমা পাওয়া যায় না। কেবল জনের সহিত কতকগুলি বিষয়ে তাঁহার অত্যন্ত সাদৃশ্য দেখিতে পাই। সে সাদৃশ্য বাহিরের কাজে ততটা নয়- কারণ, কাজে বিদ্যাসাগর জনসন অপেক্ষা অনেক বড়ো ছিলেন; কিন্তু এই সাদৃশ্য অন্তরের সরল প্রবল এবং অকৃত্রিম মনুষ্যত্বে। জনও বিদ্যাসাগরের ন্যায় বাহিরে রূঢ় ও অন্তরে সুকোমল ছিলেন; জনও পাণ্ডিত্যে অসামান্য, বাক্যালাপে সুরসিক, ক্রোধে উদ্দীপ্ত, স্নেহরসে আর্দ্র, মতে নির্ভীক, হৃদয়ভাবে অকপট এবং পরহিতৈষায় আত্মবিস্মৃত ছিলেন। দুর্বিষহ দারিদ্রও মুহূর্ত- কালের জন্য তাহার আত্মসম্মান আচ্ছন্ন করিতে পারে নাই। সুবিখ্যাত ইংরাজিলেখক লেস্লি স্টীফন, জ্‌নসন সম্বন্ধে যাহা বলিয়াছেন তাহার কিয়দংশ অনুবাদ করিয়া দিলাম।

 মতের পরিবর্তে কেবল কথামাত্রদ্বারা তাহাকে ভুলাইবার জো ছিল না, এবং তিনি এমন কোনো মতবাদও গ্রাহ করিতেন না যাহা অকৃত্রিম আবেগ উৎপাদনে অক্ষম। ইহা ব্যতীত তাহার হৃদয়বৃত্তিসকল যেমন অকৃত্রিম তেমনি গভীর এবং সুকোমল ছিল। তাঁহার বৃদ্ধা এবং কুশ্রী স্ত্রীর প্রতি তাহার প্রেম কী পবিত্র ছিল। যেখানে কিছুমাত্র

৬২