পাতা:বিদ্যাসাগরচরিত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিদ্যাসাগরচরিত

নেমি আশ্রয় করিয়া আবর্তিত হইত তাহা মহত্ত্ব, তাহা প্রথামাত্রের দাসত্ব নহে।..... অ্যাডিসন দেখাইয়াছিলেন খৃস্টানের মরণ কিরূপ; কিন্তু তাঁহার জীবন আরামের অবস্থা ও স্টেট-সেক্রেটারির পদ এবং কাউণ্টেসের সহিত বিবাহের মধ্য দিয়া অতি অবাধে প্রবাহিত হইয়াছিল; মাঝে মাঝে পোর্ট্ মদিরার অতিসেবন ছাড়া আর কিছুতেই তাঁহার নাড়ী ও তাঁহার মেজাজকে চঞ্চল করিতে পারে নাই। কিন্তু আর-একজন কঠিন বৃদ্ধ তীর্থযাত্রী, যিনি অন্তর এবং বাহিরের দুঃখরাশি সত্ত্বেও যুদ্ধ করিয়া জীবনকে শান্তির পথে লইয়া গেছেন, যিনি এই সংসারের মায়ার হাটে উপহসিত হইয়া মৃত্যুচ্ছায়ার অন্ধগুহামধ্যে অবতীর্ণ হইয়াছিলেন, এবং যিনি নৈরাশ্যদৈত্যের বন্ধন হইতে বহু চেষ্টায়, বহু কষ্টে উদ্ধার পাইয়াছিলেন, তাঁঁহার মৃত্যুশয্যায় আমাদের মনে গভীরতর ভাবাবেগ উচ্ছসিত হইয়া উঠে। যখন দেখিতে পাই এই লোকের অন্তিমকালের হৃদয়বৃত্তি কিরূপ কোমল, গম্ভীর এবং সরল, তখন আমরা স্বতই অনুভব করি যে, যে নিরীহ ভদ্রলোকটি পরম শিষ্টাচার রক্ষা করিয়া বঁচিয়াছিলেন ও মরিয়াছিলেন, তাঁঁহার অপেক্ষা উন্নততর সত্তার সন্নিধানে বর্তমান আছি।

 এই বর্ণনা পাঠ করিলে বিদ্যাসাগরের সহিত জনসনের সাদৃশ্য সহজেই মনে পড়ে। বিদ্যাসাগরও কেবল ক্ষুদ্র সংকীর্ণ অভ্যস্ত ভব্যতার মধ্য দিয়া চলিতে পারেন নাই; তাঁঁহারও স্নেহ ভক্তি দয়া, তাঁহার বিপুলবিস্তীর্ণ হৃদয়, সমস্ত আদবকায়দাকে বিদীর্ণ করিয়া কেমন অসামান্য আকারে ব্যক্ত হইত তাহা তাঁহার জীবনচরিতের নানা ঘটনায় প্রকাশ পাইয়াছে।

৬৪