পাতা:বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ.pdf/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৪
বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ
“উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের হালকাবন্দি বিদ্যালয়গুলিতে যে-প্রণালী অনুসৃত হইয়াছে তাহার সঠিক খবর আমি জানি না। বিহারের বিদ্যালয়গুলিতে ঐ একই প্রণালী অবলম্বিত হইয়াছে ধরিয়া লইলেও আমি বলিব বাংলার পাঠশালাগুলিতে যে ব্যবস্থা আছে ইহা অনেকাংশে তদনুরূপ। যতটা বুঝিতেছি, বিহারের বিদ্যালয়গুলির শিক্ষণীয় বিষয়ের সীমা হইতেছে পত্রলিখন, জমিদারী হিসাব ও দোকানের খাতাপত্র রাখা পর্যন্ত। বিহারের এবং বাংলার পাঠশালাগুলির মধ্যে প্রভেদ এই যে, কিছু উন্নত ধরণের কয়েকখানি ছাপা বই বিহারে নামমাত্র ব্যবহৃত হয়। বাংলা দেশে এইরূপ শিক্ষা-পদ্ধতির প্রচার যদি সরকারের উদ্দেশ্য হয়, তাহা হইলে গুরুমহাশয়দের অল্পকিছু মাসিক বেতনের ব্যবস্থা, তাহাদের পাঠশালাগুলিতে খানকয়েক মুদ্রিত পুস্তকের প্রবর্ত্তন এবং সেগুলি সরকারী পরিদর্শনের অধীন করিলে সহজেই উদ্দেশ্য সাধিত হইবে। কিন্তু আমি বলিতে বাধ্য, এরূপ শিক্ষা নগণ্য হইলেও জনসাধারণের মধ্যে (যদি জনসাধারণ কথার অর্থে শ্রমিক-শ্রেণী বুঝিতে হয়) বিস্তৃত হইবে না। কেননা, এখন পর্যন্ত বিহারে বা বাংলায় এই শ্রেণী হইতে অতি অল্পসংখ্যক বালকই পাঠশালায় শিক্ষার্থী হয়।
“শ্রমিক-শ্রেণীর অবস্থার উপরই ইহার কারণ আরোপিত করা যায়। সাধারণতঃ অবস্থা এতই খারাপ যে ছেলেদের শিক্ষার দরুণ তাহারা কোনরূপ ব্যয়ভার বহন করিতে অসমর্থ। একটু বড় হইলেই যখন কোনরূপ কাজ করিয়া যৎসামান্য কিছু উপার্জন করিবার উপযুক্ত হ’বে তখন আর তাহারা ছেলেদের পাঠশালায় রাখিতে পারে না। তাহারা ভাবে—এবং সম্ভবতঃ এ ভাবনা যথার্থ—যে ছেলেদের কিছু লেখাপড়া শিখাইলেই তাহাদের অবস্থার উন্নতি হইবে না, তাই ছেলেদের পাঠশালায় পাঠাইতে তাহাদের কোনরূপ প্রবৃত্তি