এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীন কর্ম্মক্ষেত্রে
৯৫
পাঠ্যপুস্তক। অবশ্য একথা অস্বীকার করিলে চলিবে না যে তখনকার দিনে এরূপ উত্তম পাঠ্যপুস্তকের বিলক্ষণ অভাব ছিল। বিদ্যাসাগরের পূর্ব্বে বাংলা-গদ্যের অবস্থা বিশেষ ভাল ছিল না। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পাঠ্যপুস্তকগুলি তাহার নিদর্শন। বিদ্যাসাগরের গদ্য কিঞ্চিৎ সংস্কৃতানুসারী হইলেও অতি সুললিত। বঙ্কিমচন্দ্রের যশোবিস্তারের পূর্ব্বে সাহিত্যিক হিসাবে ঈশ্বরচন্দ্র অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র লিখিয়াছেন,—
“প্রবাদ আছে যে, রাজা রামমোহন রায় সে সময়ের প্রথম গদ্য-লেখক। তাঁহার পর যে গদ্যের সৃষ্টি হইল, তাহা লৌকিক বাঙ্গালা ভাষা হইতে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এমন কি, বাঙ্গালা ভাষা দুইটি স্বতন্ত্র বা ভিন্ন ভাষায় পরিণত হইয়াছিল। একটীর নাম সাধুভাষা অর্থাৎ সাধুজনের ব্যবহার্য্য ভাষা, আর একটীর নাম অপর ভাষা অর্থাৎ সাধু ভিন্ন অপর ব্যক্তিদিগের ব্যবহার্য্য ভাষা। এস্থলে সাধু অর্থে পণ্ডিত বুঝিতে হইবে।...
“এই সংস্কৃতানুসারিণী ভাষা প্রথম মহাত্মা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও অক্ষয়কুমার দত্তের হাতে কিছু সংস্কার প্রাপ্ত হইল। ইহাদিগের ভাষা সংস্কৃতানুসারিণী হইলেও তত দুর্ব্বোধ্য নহে। বিশেষতঃ বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ভাষা অতি সুমধুর ও মনোহর। তাঁহার পূর্ব্বে কেহই এরূপ সুমধুর বাঙ্গালা গদ্য লিখিতে পারেন নাই, এবং তাঁহার পরেও কেহ পারে নাই।”[১]
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ একটি অতুলনীয় প্রবন্ধে বিদ্যাসাগরের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করিয়াছেন। বিদ্যাসাগরের ভাষা সম্বন্ধে তিনি লিখিয়াছেন,—
- ↑ “বাঙ্গালা সাহিত্যে ৺প্যারীচাঁদ মিত্রের স্থান”—বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (প্যারীচাঁদ মিত্রের গ্রন্থাবলী, ১২৯৯)