পাতা:বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ.pdf/১৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীন কর্ম্মক্ষেত্রে
৯৭
গ্রাম্য পাণ্ডিত্য এবং গ্রাম্য বর্ব্বরতা উভয়ের হস্ত হইতেই উদ্ধার করিয়া তিনি ইহাকে পৃথিবীর ভদ্রসভার উপযোগী আর্য্য ভাষা রূপে গঠিত করিয়া গিয়াছেন। তৎপূর্ব্বে বাঙ্গলা-গদ্যের যে অবস্থা ছিল তাহ আলোচনা করিয়া দেখিলে এই ভাষাগঠনে বিদ্যাসাগরের শিল্পপ্রতিভা ও সৃজনক্ষমতার প্রচুর পরিচয় পাওয়া যায়।”[১]

 বিদ্যাসাগরের রচনা কিরূপ আবেগময়ী, ওজস্বী ও প্রাঞ্জল ছিল তাহা ‘বিধবাবিবাহ’ পুস্তকের নিম্নোদ্ধৃত অংশ পাঠ করিলেই প্রতীয়মান হইবে:—

“ধন্য রে দেশাচার! তোর কি অনির্ব্বচনীয় মহিমা! তুই তোর অনুগত ভক্তদিগকে, দুর্ভেদ্য দাসত্বশৃঙ্খলে বন্ধ রাখিয়া, কি আধিপত্য করিতেছিস। তুই, ক্রমে ক্রমে আপন একাধিপত্য বিস্তার করিয়া, শাস্ত্রের মস্তকে পদার্পণ করিয়াছিস, ধর্ম্মের মর্ম্মভেদ করিয়াছিস, হিতাহিতবোধের গতিরোধ করিয়াছিস, ন্যায় অন্যায় বিচারের পথ রুদ্ধ করিয়াছিস। তোর প্রভাবে, শাস্ত্রও অশাস্ত্র বলিয়া গণ্য হইতেছে, অশাস্ত্রও শাস্ত্র বলিয়া মান্য হইতেছে; ধর্ম্মও অধর্ম্ম বলিয়া গণ্য হইতেছে, অধর্ম্মও ধর্ম্ম বলিয়া মান্য হইতেছে। সর্ব্বধর্ম্মবহিষ্কৃত, যথেচ্ছাচারী দুরাচারেরাও, তোর অনুগত থাকিয়া, কেবল লৌকিকরক্ষাগুণে, সর্বত্র সাধু বলিয়া গণনীয় ও আদরণীয় হইতেছে; আর, দোষস্পর্শশূন্য প্রকৃত সাধু পুরুষেরাও, তোর অনুগত না হইয়া, কেবল লৌকিকরক্ষায় অযত্নপ্রকাশ ও অনাদরপ্রদর্শন করিলেই, সর্ব্বত্র নাস্তিকের শেষ, অধার্ম্মিকের শেষ, সর্ব্বদোষে দোষীর শেষ বলিয়া গণনীয় ও নিন্দনীয় হইতেছেন। তোর অধিকারে, যাহারা, জ্ঞাতিভ্রংশকর, ধর্ম্মলোপকর কর্ম্মের
  1. “বিদ্যাসাগর চরিত”-সাধনা, ভাদ্র, ১৩০২, পৃ. ৩০৩-০৫।