পাতা:বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ.pdf/১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

১০

 এইরূপ ভুট্টা কেনা চলিতেছে, ইতিমধ্যে দুটা কুড়ি-বাইশ বছরের সাঁওতাল ছুঁড়ি আসিয়া উঠানে দাঁড়াইয়া বলিল—ও বিদ্যেসাগর, আমাদের কিছু খাবার দে। তাহারা উঠানে ছুটাছুটি করিতে লাগিল, কিন্তু কিছুতেই রকে উঠিল না। আমি বলিলাম—ওরা খাবার চাচ্ছে, আপনার এত মতিচুর ছানাবড়া রহিয়াছে, দু-একটা দেন না। তিনি বলিলেন—দূর হ’, ওরা কি ওর স্বাদ জানে, না রস জানে? দিলে টপ্ টপ্ করিয়া খাইয়া ফেলিবে। ওদের খাবার হইলেই হইল, ভালমন্দ খাবার ওরা বোঝে না। ওর জন্যে আবার আর এক রকমের লোক আছে। এখান থেকে এক ক্রোশ দূরে কোরা বলিয়া এক গ্রাম আছে, সেখানে এক মারহাট্টা রাজা আছে। বারগীর হাঙ্গামার সময় এইখানে উহারা একটি ছোটখাট রাজত্ব করে। এখনও সেখানে অনেক মারহাট্টা আছে; ব্রাক্ষ্মণও আছে, অন্য জাতও আছে। কিন্তু সাঁওতালের সঙ্গে থেকে সাঁওতালের মত হইয়া গিয়াছে। তাদের কেবল ভাল খাবার দিলে তারা এক কামড় খাইয়া দেখে, পরীক্ষা করে, কি কি জিনিষে তৈরি জিজ্ঞাসা করে, কোথা থেকে আনানো হয়েছে; তখন আমি বুঝিতে পারি, এদের জিব আছে; আর এই এদের কিছুই নেই। মুড়ি চিঁড়াও যেমন খায়, সন্দেশ রসগোল্লাও তেমনি খায়।

 আমার কথায় মতিচুর ছানাবড়া দিলেন না দেখিয়া আমি বলিলাম— তবে আমি এক কাজ করি, আমার সঙ্গে কতকগুলা পরশু-ভাজা লুচি আছে, আমি সেগুলি ইহাদিগকে দিয়া দি। তিনি বলিলেন—তোর সঙ্গে আছে নাকি? কই, দেখি। আমি দৌড়িয়া ষ্টেশনে গিয়া পোঁটলা খুলিয়া কলাপাতায় বাঁধা প্রায় দুদিস্তা লুচি লইয়া আসিলাম। বলিলাম—দুদিন বাঁধা আছে, কলাপাতাগুলা সেদ্ধ হইয়া গিয়াছে, লুচিতেও কলাপাতার গন্ধ হইয়াছে। বলিয়াই সেগুলা ঐ ছুঁড়িদের দিতে যাইতেছি, বিদ্যাসাগর মহাশয় বলিলেন—আমায় দে, ওদের কি অমন ক’রে দিতে আছে? বলিয়া