পাতা:বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ.pdf/১৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৪
বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ

অপূর্ব্ব জীবনের যথেষ্ট আলোচনা হইয়া গিয়াছে বলিয়া, আমরা সে- সম্বন্ধে বেশী কথা বলি নাই। শিক্ষাবিস্তারে বিদ্যাসাগরের কৃতিত্ব কতটা এবং গ্রন্থ প্রণয়ন ও সম্পাদনে তিনি কিরূপ শক্তি নিয়োগ করিয়াছেন, সেই কথাই আমরা বিস্তারিতভাবে বলিয়াছি, এবং এ-সম্বন্ধে বিদ্যাসাগর যে- সকল সরকারী এবং বেসরকারী চিঠিপত্রের আদানপ্রদান করিয়াছিলেন তাহারও পূর্ণবিবরণ দিয়াছি। এ-সকল চিঠিপত্রের মধ্যে আমরা বিদ্যাসাগরের চরিত্রের আরও ঘনিষ্ঠ পরিচয় পাই।

 ঈশ্বরচন্দ্র ছিলেন অত্যন্ত দৃঢ়চিত্ত ব্যক্তি। তিনি যে সঙ্কল্প করিতেন তাহা হইতে কেহ তাঁহাকে এক তিলও বিচ্যুত করিতে পারত না। তিনি যাহা করিতেন তাহা ভাবিয়া-চিন্তিয়াই করিতেন এবং দুরদর্শী ছিলেন বলিয়া কোনো কাজের ফলাফল সম্বন্ধে পূর্বেই ধারণা করিয়া লইতেন। অন্যলোক হঠাৎ একটা কিছু বলিয়া তাঁহাকে সঙ্কল্পচ্যুত করিতে পারিত না, সেজন্য তাঁহাকে একগুঁয়ে মনে করিত। পিতামহ রামজয় তর্কভূষণ সম্বন্ধে তিনি স্বরচিত জীবন-চরিতে যে-কথা বলিয়াছেন, বিদ্যাসাগরের সম্বন্ধেও সেই কথা খাটে:—

“তিনি নিরতিশয় তেজস্বী ছিলেন; কোনও অংশে, কাহারও নিকট অবনত হইয়া চলিতে, অথবা কোনও প্রকারে, অনাদর বা অবমাননা সহ্য করিতে পারিতেন না। তিনি, সকল স্থলে, সকল বিষয়ে, স্বীয় অভিপ্রায়ের অনুবর্ত্তী হইয়া চলিতেন, অন্যদীয় অভিপ্রায়ের অনুবর্ত্তন, তদীয় স্বভাব ও অভ্যাসের সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল। উপকার প্রত্যাশায়, অথবা অন্য কোনও কারণে, তিনি কখনও পরের উপাসনা বা আনুগত্য করিতে পারেন নাই।”

 বিদ্যাসাগরের সঙ্কল্প লাটসাহেবের অনুরোধেও টলে নাই। বঙ্গদেশে শিক্ষাবিস্তার-কার্য্যে ঈশ্বরচন্দ্র অপেক্ষা আর কেহ বেশী খাটেন নাই। দেশের লোক হইতে স্বয়ং ছোটলাট পর্যন্ত একথা স্বীকার করিতেন।