পাতা:বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ.pdf/১৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চারিত্রিক বিশেষত্ব
১১৫

কিন্তু কার্য্যকালে দেখা যাইত তাঁহার মাথার উপর একজন-না-একজন সাহেব বিভাগীয় অধ্যক্ষ হইয়া আছে। ছোটলাট হ্যালিডে তাঁহার বন্ধু ছিলেন। সেই হ্যালিডে সাহেবের আমলেও দেখা গেল, প্র্যাট সাহেব ছুটি লইয়া বিলাত গেলেন অথচ ঈশ্বরচন্দ্রকে ইন্‌স্পেষ্টার অভ স্কুলস্ করা হইল না। ইহাতে তাঁহার মর্যাদাবোধে আঘাত লাগিল। বিদ্যাসাগর পদত্যাগপত্র দাখিল করিলেন। ছোটলাট হ্যালিডের বারংবার অনুরোধেও তিনি অটল রহিলেন। সরকারী চাকুরি তিনি আর করেন নাই।

 কাশী সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ ব্যালাণ্টাইনের সহিত মতবিরোধও তাঁহার চরিত্রের এই দিকটি উজ্জ্বল করিয়া তুলিয়াছে। সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত বলিয়া ব্যালাণ্টাইনের যথেষ্ট খ্যাতি ছিল। তাহার উপর তিনি সাহেব। কাজেই কলিকাতা সংস্কৃত কলেজ পরিদর্শনের ভার তাঁহার উপর পড়িল। তিনি অধিকাংশ বিষয়ে অধ্যক্ষ বিদ্যাসাগরের সহিত একমত হইয়াও কয়েকটি বিষয়ে নিজের মতামত চালাইবার জন্য মন্তব্য করলেন। সমপদস্থ ব্যক্তি—কেবল ইংরেজ বলিয়া—তাঁহার উপর মত চালাইবে ইহা বিদ্যাসাগরের সহ্য হইল না। তিনি রিপোর্টের এক কড়া জবাব লিখিলেন এবং তাহাতে আভাস দিলেন, যদি নিজের ইচ্ছা ও বিবেচনার বিরুদ্ধে তাঁহাকে কাজ করিতে হয় তাহা হইলে বাধ্য হইয়া তাঁহাকে কর্ম্ম পরিত্যাগ করিতে হইবে। অবশেষে বিদ্যাসাগরেরই জয়লাভ হইল। তিনি নিজের জেদ সম্পূর্ণ বজায় রাখিলেন।

 বাল্যকাল হইতেই ঈশ্বরচন্দ্র এইরূপ জেদী। পিতাও বালক-পুত্রের চরিত্রের এই বিশেষত্ব বুঝিয়া চলিতেন। এই বিশেষত্ব বরাবর বজায় ছিল। এইরূপ জেদ কিন্তু কোনো অন্যায় কাজে কখনও প্রযুক্ত হয় নাই। দৃঢ়চিত্ততা তাঁহার চরিত্রকে মহান্ করিয়া তুলিয়াছে। সকল বাধা অতিক্রম করিয়া বিধবা-বিবাহের প্রবর্ত্তন তাঁহার দুর্জ্জয়