পাতা:বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ.pdf/১৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চারিত্রিক বিশেষত্ব
১১৭

পরিশোধ করিতে অবশেষে সম্মত হইলেও তাঁহাকে যে যথেষ্ট ভুগিতে হইয়াছিল তাহা স্বীকার করিতে হইবে। তবুও স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারে তাঁহার আগ্রহ কিছুমাত্র কমে নাই।

 নারীর প্রতি তাঁহার অপরিসীম শ্রদ্ধা ছিল বলিয়া নারীজাতির উন্নতি ও দুঃখ লাঘবের জন্য সকল অনুষ্ঠানে তিনি অগ্রণী ছিলেন। বিধবা- বিবাহ হইতে আরম্ভ করিয়া বীটন কলেজের প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত যে-কোনো কার্য্য তাহার উদাহরণ।

 একদিকে তাঁহার প্রকৃতি যেমন বলিষ্ঠ ছিল অন্যদিকে তাঁহার স্বভাব ছিল তেমনি কোমল ও সরল। তাই শত্রু-মিত্র সকলেরই তিনি প্রশংসাভাজন ছিলেন।

 নানারূপ সমাজ-সংস্কারে হাত দিলেও বেশভূষায় আচারে-ব্যবহারে তিনি কখনও সাহেবদের নকল করেন নাই।

“ব্রাহ্মণপণ্ডিত যে চটিজুতা ও মোটা ধুতিচাদর পরিয়া সর্ব্বত্র সম্মান লাভ করেন, বিদ্যাসাগর রাজদ্বারেও তাহা ত্যাগ করিবার আবশ্যকতা বোধ করেন নাই। তাঁহার নিজের সঙ্গে যখন ইহাই ভদ্রবেশ, তখন তিনি অন্য সমাজে অন্য বেশ পরিয়া আপন সমাজের ও সেই সঙ্গে আপনার অবমাননা করিতে চাহেন নাই। শাদা ধুতি ও শাদা চাদরকে ঈশ্বরচন্দ্র যে গৌরব অর্পণ করিয়াছিলেন, আমাদের বর্ত্তমান রাজাদের ছদ্মবেশ পরিয়া আমরা আপনাদিগকে সে গৌরব দিতে পারি না; বরঞ্চ এই কৃষ্ণ চর্মের উপর দ্বিগুণতর কৃষ্ণকলঙ্ক লেপন করি। আমাদের এই অবমানিত দেশে ঈশ্বরচন্দ্রের মত এমন অখণ্ড পৌরুষের আদর্শ কেমন করিয়া জন্মগ্রহণ করিল আমরা বলিতে পারি না।”[১]
  1. “বিদ্যাসাগর চরিত”—শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সাধনা—ভাদ্র, ১৩০২, পৃ ৩৩৯