পাতা:বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ.pdf/২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

১৮

তার আটগুণ রাখিতে হইবে। বেচারা কি করে, তাই রাখিল। তখন ঘাটমাঝি বলিল—ওই দেখিতেছেন নৌকা আছে; নৌকায় বোটে আছে, দাঁড় আছে, হাল আছে, লগি নাই; বন্যার সময় নদীতে লগি দিয়া থাই পাওয়া যায় না। আপনি বোটে বাইতে বাইতে ওই ওপারে চলিয়া যান। ওপারে যে টঙ দেখিতেছেন, উহার কাছে নৌকা রাখিয়া যেখানে ইচ্ছা চলিয়া যান।

 আমরা সেই ঘাটমাঝির মত টঙ বাঁধিয়া বসিয়া আছি। ছেলেরা পড়িতে আসিলে তাদের কাছ থেকে নানারকম ফি আদায় করিয়া বলি—ঐ স্কুল আছে, বেঞ্চি আছে, চেয়ার আছে, মাষ্টার আছে, পণ্ডিত আছে, কাগজ কলম বই কিনিয়া পড় গে। মাসে মাসে আমার এখানে ফি-টি দিয়া যাইও।

 বিদ্যাসাগর মহাশয়ের গল্প শেষ হইতে হইতেই ষ্টেশনে টিকিটের ঘণ্টা পড়িল, বুঝা গেল আমাদের গাড়ি আসিতেছে। আমরা উঠিয়া ষ্টেশনের দিকে যাইবার উদ্যোগ করিতে লাগিলাম। আমরা তাঁহাকে প্রণাম করিয়া বাহির হইলাম, মনে করিলাম এদিনের ব্যাপারটা চিরদিনই আমাদের মনে গাঁথা থাকিবে। আমরা যেন কোনো মহিষর আশ্রম হইতে বাহির হইতেছি। দেখুন, প্রায় বাহান্ন বছর পরেও সেদিনের কথা আমার কেমন মনে আছে।

রুইমাছের মুড়ো

 আমার বয়স যখন পাঁচ বছর, আমরা বিদ্যাসাগর মহাশয়ের নাম খুব শুনিয়াছি। পুজোর সময় শান্তিপুরের কাপড় পাইতাম, তাহার পাড়ে লেখা থাকিত “বেঁচে থাক বিদ্যাসাগর চিরজীবী হ’য়ে।” দাদারা যে-সব বই পড়িতেন, তাতে প্রায়ই লেখা থাকিত “ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রণীত।” বাড়িতেও প্রায় বিদ্যাসাগর মহাশয়ের নাম হইত।