পাতা:বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ.pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

২৩

তাঁহার পদধূলি লইব। তাই আমি একখানি নৌকা করিয়া ফরাসডাঙ্গার দিকে গেলাম; নৌকায় উঠিয়াছি, এমন সময় মনে হইল যে আতপুরের মুখুজ্যেদের ইটখোলায় গিয়া একটা কথা বলিয়া আসি। তাই আগে আতপুরে গেলাম, পরে সেখান হইতে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বাড়ি গেলাম। তাঁহার বাড়ির সামনে গঙ্গার চড়ায় বিস্তর ইট পড়িয়াছিল রাস্তা ছিল না, ইটের উপর দিয়া অতি কষ্টে যাইতে হইত। নৌকা হইতে নামিয়া দেখিলাম—সামনের বাড়িতে বারাণ্ডায় বিদ্যাসাগর মহাশয় দাঁড়াইয়া আছেন,—আমার নৌকাখানা ও ইটের উপর দিয়া আমার যাওয়ার কষ্টটা দেখিতেছেন। আমি তাঁহার কম্পাউণ্ডের ভিতর ঢুকিয়া এদিক-ওদিক বেড়াইতেছি, তিনি উপর হইতে বলিলেন—ঘরের ভেতর ঢোক্ না, উহার ভেতর সিঁড়ি আছে। আমি উপরে উঠিয়া দেখি বিদ্যাসাগর মহাশয় দাঁড়াইয়াই আছেন; টেবিলের কাছে চেয়ারে একটি লোক বসিয়া আছে। লোকটিকে কোথায় দেখিয়াছি দেখিয়াছি মনে হইল;—দুচারটি কথায় বুঝিতে পারিলাম তিনি শ্রীযুক্ত আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, প্রথম প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ স্কলার। বুঝিলাম—তিনি বিদ্যাসাগর মহাশয়ের কলেজে চাকরি চান। বিদ্যাসাগর মহাশয় তাঁহার সহিত যেরূপভাবে কথা বলিতেছেন, তাহাতে বোধ হইল, তাঁহাকে স্নেহও করেন, সম্ভ্রমও করেন। তাঁহার সহিত বন্দোবস্তও হইল, তিনি মেট্রোপলিটান কলেজে ইংরেজী পড়াইবেন, বিদ্যাসাগর মহাশয় তাঁহাকে ২০০৲ শত টাকা মাহিনা দিবেন। কথাবার্তা স্থির হইয়া গেল, তিনি উঠিবার জন্য ব্যস্ত হইলেন; বিদ্যাসাগর মহাশয় বলিলেন—তা হবে না, কিছু খেয়ে যেতে হবে। বলিয়াই পিছনের হলঘরে ঢুকিলেন। দেখিলাম সেখানে পাঁচ-সাতটি কাঁচের আলমারি আছে, প্রত্যেক তাকে ভিন্ন ভিন্ন, রকমের আঁব। বিদ্যাসাগর মহাশয় তাঁহাকে একখানি আসনে বসাইয়া সামনে একখানি রেকাবী দিয়া নিজে ছুরি দিয়া আঁব কাটিতে বসিলেন।