পাতা:বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ.pdf/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সংস্কৃত কলেজের পুনর্গঠন
২১

 এই পত্র-বিনিময় হইতে হিন্দুশাস্ত্র সম্বন্ধে বিদ্যাসাগরের মনোভাবের যে পরিচয় পাওয়া যায়, তাহা কৌতুহলোদ্দীপক। সংস্কৃত-শাস্ত্রে তাঁহার গভীর পাণ্ডিত্য ছিল, অথচ আনুষঙ্গিক শাস্ত্রীয় গোঁড়ামি মোটেই ছিল না। তিনি ছিলেন যুক্তিবাদী এবং অসাধারণ কর্ম্মী। পাশ্চাত্য জ্ঞান-আহরণের পক্ষে প্রাচীন শাস্ত্রের উপর অন্ধভক্তিই যে প্রধান অন্তরায়,—ইহা তিনি বুঝিয়াছিলেন। ভারতবাসীর মন পাশ্চাত্যজ্ঞানমণ্ডিত হইয়া উঠে,— ইহাই ছিল তাঁহার ঐকান্তিক অভিলাষ। সেইজন্য সংস্কৃত কলেজের ইংরেজী-বিভাগের উন্নতির তিনি এত পক্ষপাতী ছিলেন। দুঃখের বিষয়, কার্যকরী শিক্ষার প্রতি বেশী ঝোঁক থাকায় বিদ্যাসাগর ভারতীয় দর্শনের মধ্যে বস্তু খুঁজিয়া পান নাই। শিক্ষা-পরিষদে প্রেরিত পত্রে তাই তিনি বলিয়াছেন,—“কতকগুলি কারণে—যাহার উল্লেখ এখনি নিষ্প্রয়োজন—সংস্কৃত কলেজে বেদান্ত ও সাংখ্য না পড়াইয়া উপায় নাই। বেদান্ত ও সাংখ্য যে ভ্রান্ত দর্শন, এ সম্বন্ধে এখন আর মতদ্বৈধ নাই। গোড়ায় যখন এদেশে ইংরেজী-শিক্ষার প্রচলন শুরু হয়, তখন একদল গোঁড়া পণ্ডিত ইহার অত্যন্ত বিরুদ্ধাচরণ করিয়াছিলেন। তাঁহাদের বক্তব্য,—যাহা কিছু দরকারী, সর্ব্বজ্ঞ ঋষিদের বাক্যের মধ্যেই তাহা পাওয়া যায়, ইংরেজী-শিক্ষা যে শুধু অপ্রয়োজনীয় তাহা নহে—সমস্ত সমাজ-শৃঙ্খলার বিরোধী। ইহার প্রতিক্রিয়া শীঘ্রই শুরু হইল। সংস্কার-প্রয়াসী একদল হিন্দু একেবারে বিপরীত পথে চলিলেন; তাঁহারা বলিতে লাগিলেন, হিন্দুশাস্ত্রে প্রয়োজনীয় জিনিষ কিছুই নাই। ব্রাহ্মণ-পণ্ডিত হইলেও বিদ্যাসাগরের ঝোঁক ছিল এই নূতন দলের দিকে। সুবিধার জন্য হিন্দু-দর্শনের দোহাই দিলেও ইহাতে তাঁহার নিজের বিশ্বাস মোটেই ছিল না। রামমোহন রায় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের উভয় দিকই ভাল বুঝিতেন; বিদ্যাসাগরের মধ্যে রামমোহনের সেই উদার-দৃষ্টির অভাব