পাতা:বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ.pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলা-শিক্ষা প্রচলনে বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টা
৩৫

প্রধান তত্ত্বাবধায়ক করিবার প্রস্তাবে তাঁহারা সম্মতি দেন নাই। সংস্কৃত কলেজ হইতে তাঁহাকে ছাড়িতে না চাহিলেও, তাঁহারা স্থির করেন যে, “এই মহৎ আন্দোলনের সঙ্গে ঈশ্বরচন্দ্রের কোন-না-কোনরূপ যোগ থাকা উচিত। পুস্তক, শিক্ষক এবং স্থানের নির্ব্বাচন, শিক্ষা-প্রণালী ও অপরাপর নানা বিষয় সম্বন্ধে তাঁহার পরামর্শ খুবই মূল্যবান হইবে।” কিন্তু হ্যালিডে যাহা ভাল বলিয়া বিবেচনা করিতেন, কোনো বাধাই তাঁহাকে সে-কাজে বিচলিত করিতে পারিত না। ইহার প্রমাণ পরে পাওয়া যাইবে।

 বিদ্যাসাগরের শক্তি সম্বন্ধে হ্যালিডের একটা শ্রদ্ধা ছিল। এই শ্রদ্ধা হইতে বন্ধুত্বের উৎপত্তি হয়। অনেক সময় তাঁহারা উভয়ে মিলিত হইয়া শিক্ষা-সম্পর্কীয় নানা বিষয়ে স্বাধীনভাবে আলোচনা করিতেন। বাংলার ছোটলাটের আসনে বসিবার পরই, হ্যালিডে বিদ্যাসাগরের উপর প্রস্তাবিত মডেল বঙ্গবিদ্যালয়গুলির স্থান নির্বাচনের ভার দিলেন। এই কাজের জন্য তাঁহাকে গ্রাম হইতে গ্রামান্তরে ঘুরিয়া বেড়াইতে হইয়াছিল। ১৮৫৪, ৩রা জুলাই ছোটলাটকে তিনি যে রিপোর্ট দেন তাহাতে দেখা যায়, তিনি ২১এ মে হইতে ১১ই জুন পর্য্যন্ত, সংস্কৃত কলেজের ছুটির সময়, হুগলী জেলার শিয়াখালা, রাধানগর, কৃষ্ণনগর, ক্ষীরপাই, চন্দ্রকোণা, শ্রীপুর, কামারপুকুর, রামজীবনপুর, মায়াপুর, মলয়পুর, কেশবপুর, পাঁতিহাল পরিভ্রমণ করিয়া দেখিয়াছিলেন। এই-সকল গ্রামের অধিবাসীরা স্কুল-প্রতিষ্ঠা ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহ দেখাইয়াছিল। এমন কি তাহারা নিজ খরচায় স্কুল-গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া দিতে প্রতিশ্রুত হয়। কলেজের ছুটি ফুরাইয়া আসায় বিদ্যাসাগর হুগলী জেলার অন্যান্য স্থান, অথবা নদীয়া, বর্দ্ধমান ও ২৪-পরগণায় যাইতে পারেন নাই। যাইতে না পারিলেও, স্কুল প্রতিষ্ঠার উপযোগী গ্রামগুলির সম্বন্ধে তিনি নানারূপ সংবাদ আহরণ