পাতা:বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ.pdf/৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্ত্রীশিক্ষা-বিস্তারে বিদ্যাসাগর
৬৩
কার্য্যকর করিবার জন্য আন্তরিক সহযোগিতা করিতে কুণ্ঠিত হইতাম না। কিন্তু যখন দেখিতেছি, সাফল্যের কোনোই নিশ্চয়তা নাই, এবং এ-কার্য্যে হস্তক্ষেপ করিলে সরকার অনর্থক অপ্রীতিকর অবস্থায় পড়িবেন, তখন কোনমতেই আমি এ ব্যাপারে পোষকতা করিতে পারি না।
“বীটন বিদ্যালয়ের জন্য যে-পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়, ফল তাহার অনুরূপ হয় নাই,—এবিষয়ে আপনার সহিত আমি একমত। কিন্তু তাই বলিয়া বিদ্যালয়টি একেবারে উঠাইয়া দেওয়া সঙ্গত মনে করি না। যে মানবহিতৈষী মহত্মার নামের সহিত বিদ্যালয়টির নাম সংযুক্ত, তিনি ভারতে নারীজাতির শিক্ষাবিস্তারকল্পে যাহা করিয়া গিয়াছেন, তাহার স্মারক-রূপেও সরকারের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির ব্যয়ভার বহন করা অবশ্যকর্ত্তব্য। মফঃস্বলের বালিকা-বিদ্যালয়গুলির পক্ষে আদর্শরূপে কাজ করিবে বলিয়াও এইরূপ শহরের মাঝখানে প্রতিষ্ঠিত এক সুব্যবস্থিত বালিকা-বিদ্যালয়ের প্রয়োজন আছে। হিন্দুসমাজের উপর এই বিদ্যালয়টির নৈতিক প্রভাব যথেষ্ট। চারিপাশের জেলা-সমূহে স্ত্রীশিক্ষা-বিস্তারের পক্ষে প্রকৃতপক্ষে ইহা পথ প্রস্তুত করিয়াছে; তাই আমার বিবেচনায় ইহার পিছনে বছরে বছরে যে বিপুল অর্থব্যয় হয়, তাহা সার্থক বলিতে হইবে। কিন্তু এ কথাও সত্য, ব্যয়সঙ্কোচ ও উন্নতির যথেষ্ট অবসর আছে। কার্যকারিতার হানি না করিয়াও, বিদ্যালয়ের খরচ অর্দ্ধেক কমাইতে পারা যায়।
“স্বাস্থ্যলাভের আশায় দীর্ঘকালের জন্য উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বায়ু-পরিবর্তনে যাইতেছি। বীটন বিদ্যালয়ের পুনর্গঠন-সম্বন্ধে যদি আমার মতামত জানিতে চান, তাহা হইলে কলিকাতায় আপনার ফিরিয়া আসা পর্য্যন্ত অপেক্ষা করিতে, ও সাক্ষাতে আলোচনা করিতে পারি।” (১ অক্টোবর, ১৮৬৭)