সহকারে সম্পাদিত হইত, অন্যত্র প্রায় সেরূপ দেখিতে পাওয়া যায় না। বস্তুতঃ, ঐ অঞ্চলের কোনও পরিবার, এ বিষয়ে এই পরিবারের ন্যায়, প্রতিপত্তিলাভ করিতে পারেন নাই। ফলকথা এই, অন্নপ্রার্থনায় রাধামোহন বিদ্যাভূষণের দ্বারস্থ হইয়া, কেহ কখনও প্রত্যাখ্যাত হইয়াছেন, ইহা কাহারও নেত্রগোচর বা কর্ণগোচর হয় নাই। আমি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করিয়াছি, যে অবস্থার লোক হউক, লোকের সংখ্যা যাই হউক, বিদ্যাভূষণ মহাশয়ের আবাসে আসিয়া সকলেই পরম সমাদর, অতিথিসেবা ও অভ্যাগতপরিচর্য্যা প্রাপ্ত হইয়াছেন।
“বিদ্যাভূষণ মহাশয়ের জীবদ্দশায়, এই মুখোপাধ্যায় পরিবারের, স্বগ্রামে ও পার্শ্ববর্ত্তী বহুতর গ্রামে, আধিপত্যের সীমা ছিল না। এই সমস্ত গ্রামের লোক বিদ্যাভূষণ মহাশয়ের আজ্ঞানুবর্ত্তী ছিলেন। অনুগত গ্রামবৃন্দের লোকদের বিবাদভঞ্জন, বিপদ্মোচন, অসময়ে সাহায্যদান প্রভৃতি কার্য্যই বিদ্যাভূষণ মহাশয়ের জীবনযাত্রার সর্ব্বপ্রধান উদ্দেশ্য ছিল। অনেক অর্থ তাঁহার হস্তগত হইয়াছিল; কিন্তু সেই অর্থের সঞ্চয় অথবা স্বীয় পরিবারের সুখসাধনে প্রয়োগ, এক দিন একক্ষণের জন্যেও, তাঁহার অভিপ্রেত ছিল না। কেবল অন্নদান ও সাহায্যদানেই সমস্ত বিনিয়োজিত ও পর্য্যবসিত হইয়াছিল। বস্তুতঃ, প্রাতঃস্মরণীয় রাধামোহন বিদ্যাভূষণ মহাশয়ের মত, অমায়িক, পরোপকারী ও ক্ষমতাপন্ন পুরুষ সর্ব্বদা, দেখিতে পাওয়া যায় না।
“রাধামোহন বিদ্যাভূষণ ও তদীয় পরিবারবর্গের নিকট, আমরা, অশেষ প্রকারে, যে উপকার প্রাপ্ত হইয়াছি, তাহার পরিশোধ হইতে পারে না। আমার যখন জ্ঞানোদয় হইয়াছে, মাতৃদেবী, পুত্র কন্যা লইয়া, মাতুলালয়ে যাইতেন, এবং এক যাত্রায়, ক্রমান্বয়ে পাঁচ ছয় মাস বাস করিতেন। কিন্তু একদিনের জন্যেও স্নেহ, যত্ন ও সমাদরের ত্রুটি হইত না। বস্তুতঃ, ভাগিনেয়ী ও ভাগিনেয়ীর পুত্রকন্যাদের উপর এরূপ স্নেহপ্রদর্শন অদৃষ্টচর ও অশ্রুতপূর্ব্ব ব্যাপার। জ্যেষ্ঠা ভাগিনেয়ীর মৃত্যু হইলে, তদীয় একবর্ষীয় দ্বিতীয় সন্তান, বিংশতি বৎসর বয়স পর্যন্ত, আদ্যন্ত অবিচলিত স্নেহে, প্রতিপালিত হইয়াছিলেন।”
ভগবতী দেবী শৈশবকালে মাতুলালয়ে লালিত পালিত হইয়াছিলেন। বাল্যকালে তাঁহার কোন অধীত বিদ্যালাভ হয় নাই। কারণ দেশে তখন স্ত্রীশিক্ষার প্রচলন ছিল না। স্ত্রীলোকদিগকে শিক্ষা দিলে সমাজের অত্যন্ত অনিষ্ট হইবে, স্ত্রীলোকেরা স্বামীকে ভক্তি করিবে না, গৃহকর্ম্মে উপেক্ষা করিবে, স্ত্রীজনোচিত লজ্জা ও ধীরতায় জলাঞ্জলি দিয়া প্রগল্ভা ও অশান্তপ্রকৃতি হইবে, এইরূপ অনিষ্টপাতের সকলে আশঙ্কা করিতেন। দেশের স্ত্রীলোকগণ তাঁহাদের কর্ত্তব্য ও দায়িত্ব বুদ্ধিতে প্রবুদ্ধা হউন, তাঁহারা মাতৃস্থানীয়া, যাহাতে পূর্ব্বতন ঋষিপত্নীগণের দৃষ্টান্ত দর্শনে প্রতিভাশালিনী ও তত্ত্বদর্শিনী হইতে পারেন, যাহাতে তাঁহারা আধ্যাত্মিক জগতে মৈত্রেয়ী, গার্গী ও উভয় ভারতীর অনুসরণ করিতে পারেন,