পাতা:বিদ্যাসাগর জননী ভগবতী দেবী.pdf/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিদ্যাসাগরের জন্ম
২১

গুরুস্থানীয়। রাজগণ ইঁহাদের নিকট শিক্ষালাভ করিয়া সমাজশাসনে সমর্থ হয়েন। এই নিয়মে, ভারতবর্ষে ভারতীয় ঋষিদিগের সৃষ্টি—এইজন্য ব্যাস, বাল্মীকি, বশিষ্ঠ, বিশ্বামিত্র, মনু, যাজ্ঞবল্ক্য, কপিল, গৌতম—সমগ্র ভারতের পূজ্যপাদ পিতৃগণস্বরূপ। ইউরোপখণ্ডেও হোমর, ভার্জ্জিল, গেলিলীও, নিউটন, কান্ত, কোমৎ, দান্তে, সেক্ষপিয়র প্রভৃতির স্থানও সেইরূপ।

 যাঁহাদিগের মধ্যে অলৌকিক প্রতিভা অথবা ধর্ম্মজ্ঞান বা বিশ্বপ্রেমের পূর্ণ বিকাশ দেখিতে পাই, তাঁহাদিগকে আমরা মহাপুরুষ মনে করিয়া পূজা করি। কিন্তু গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতীর ন্যায় বিশ্বপ্রেম, প্রতিভা ও ধর্ম্মজ্ঞানের ত্রিধারা যাঁহাতে সম্মিলিত দেখিতে পাই, তাঁহাকে বিরাট মহাপুরুষ বলিয়া বন্দনা করি। ইঁহাদের ক্রিয়াকলাপে যেরূপ অমানুষিক শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়, জন্মবৃত্তান্তও সেইরূপ অসাধাবণ ও অশ্রুতপূর্ব্ব ঘটনাপূর্ণণ বলিয়া প্রচারিত হইয়া থাকে। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জন্মবৃত্তান্তও এইরূপ কিছ; বিচিত্রতাপূর্ণ বলিয়া জনশ্রুতি আছে এবং তাহা অমলক নহে।

 আমরা পূর্ব্বেই বলিয়াছি ঠাকুরদাস কার্য্যক্ষম হইলে, রামজয় পুনরায় তীর্থপর্য্যটনে বহির্গত হন। তিনি দ্বারকা, জ্বালামুখী, বদরিকাশ্রম ও অন্য নানা তীর্থস্থান পর্য্যটন করিয়া পরিশেষে কেদারনাথ পাহাড়ে অবস্থিতি করেন। দীর্ঘকালের মধ্যে তিনি তাঁহার পরিবারবর্গের কোন সংবাদ রাখেন নাই। রামজয় এক দিবস (কেদারনাথ পাহাড়ে) নিশীথ সময়ে স্বপ্ন দেখেন যে “রামজয়, তুমি বৃথা কেন ভ্রমণ করিতেছ? স্বদেশে যাও, তোমার বংশে এক মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করিয়াছেন, তিনি তোমার বংশের মুখ উজ্জ্বল করিবেন। তিনি সাক্ষাৎ দয়ার সাগর ও অদ্বিতীয় পণ্ডিত হইয়া, নিরন্তর বিদ্যাদান ও নিরুপায় লোকদিকের ভরণ পোষণাদির ব্যয় নির্ব্বাহ দ্বারা তোমার বংশে অনন্তকালস্থায়িনী কীর্ত্তি সংস্থাপন করিবেন।” রামজয়, পাহাড়ের মধ্যে নিশীথ সময়ে এরূপ অসম্ভব স্বপ্নদর্শন করিয়া চিন্তা করিতে লাগিলেন যে, আমি বহুদিন অতীত হইল, সংসারাশ্রমে জলাঞ্জলি দিয়া নিভৃত স্থানে ঈশ্বরারাধনায় মনপ্রাণ সমর্পণ করিয়া কালাতিপাত করিতেছি। এক্ষণে তাহারা কি করতেছে ও কে আছে না আছে, তাহাও জানি না। এবম্বিধ চিন্তায় নিমগ্ন হইয়া পুনর্ব্বার নিদ্রাভিভূত হইলে, পুনরায় স্বপ্নে দেখিলেন, কে যেন বলিতেছে, “রামজয় তুমি পরিবারগণের নিকট প্রস্থান কর, আর বিলম্ব করিও না, তোমার প্রতি ঈশ্বর সদয় হইয়াছেন।” নিদ্রাভঙ্গ হইলে, নানাপ্রকার ভাবিয়া চিন্তিয়া, রামজয় স্বদেশাভিমুখে যাত্রা করিলেন। অবিরত ৬ মাস পদব্রজে গমন করিয়া, বীরসিংহে সমুপস্থিত হইয়া শুনিলেন, তাঁহার পুত্র ঠাকুরদাস কলিকাতায় বিষয়কর্ম্মে নিযুক্ত থাকিয়া সংসার প্রতিপালন করিতেছেন। কনিষ্ঠ পুত্র কালিদাসের বিবাহকর্ম্ম সম্পন্ন হইয়াছে এবং জ্যেষ্ঠপুত্র ঠাকুরদাসের পত্নী ভগবতী দেবী গর্ভবতী হইয়া অবধি উন্মাদগ্রস্ত হইয়াছেন। অনন্তর রামজয় দেশে আগমন করিয়াছেন