গণনা করিয়া বলিলেন, ইঁহার কোন রোগ নাই; ঈশ্বরানুগৃহীত কোন মহাপুরুষ ইঁহার গর্ভে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন, তাঁহার তেজঃ প্রভাবে এরূপ হইতেছে, কোনরূপ ঔষধ সেবন করাইবেন না। গর্ভস্থ বালক ভূমিষ্ঠ হইলেই ইনি রোগমুক্তা হইবেন। ভবানন্দ ভট্টাচার্য্য মহাশয় যাহা বলিয়াছিলেন তাহাই হইল। প্রসবের পরক্ষণেই ভগবতী দেবীর আর কোন উন্মাদচিহ্ন পরিলক্ষিত হইল না। এ কারণ, দুগাদেবী সর্ব্বদা ভবানন্দ ভট্টাচার্য্যের ভূয়সী প্রশংসা করিতেন।
ঈশ্বরচন্দ্র ভূমিষ্ঠ হইবার কিয়ৎক্ষণ পরে, ঠাকুরদাস দ্রব্যাদি ক্রয় করিবার জন্য অতি সন্নিহিত কুমারগঞ্জের হাটে গিয়াছিলেন। তথা হইতে বাটীতে আসিতেছেন দেখিয়া, রামজয় কিছু অগ্রসর হইয়া বলিলেন, “ঠাকুরদাস, অদ্য আমাদের একটী এঁড়ে বাছুর হইয়াছে।” তৎকালে গৃহে একটি গাভীও গর্ভিনী হইয়াছিল। ঠাকুরদাস মনে করিলেন, গর্ভবতী গাভীটি প্রসব করিয়াছে। তিনি বাটী প্রবেশ করিয়া গোশালায় গমন করিলেন, কিন্তু দেখিলেন গাভী প্রসব করে নাই। তখন রামজয় ঈষৎ হাস্যবদনে সুতিকাগৃহে প্রবেশ করিয়া ঈশ্বরচন্দ্রকে দেখাইয়া বলিলেন, এছেলে এঁড়ের মত বড় একগুঁয়ে হইবে। ইহার প্রতিজ্ঞা হিমাদ্রির ন্যায় অটল অচল রহিবে এবং প্রতিজ্ঞার পরাক্রমে চতুর্দ্দিক কম্পিত হইবে, একারণ এঁড়ে বাছুর বলিলাম। ইহার দ্বারা উত্তরকালে দেশের বিশেষরূপ উপকার হইবে। তুমি ইহাকে সামান্য এঁড়ে জ্ঞান করিবে না, এ নিজের প্রতিজ্ঞা রক্ষা করিয়া সর্ব্বত্র জয়ী হইবে, এই বালক ক্ষণজন্মা, প্রতিদ্বন্দিহীন ও দয়ার অবতার হইবে, ইহার যশোগীতিতে সমগ্র বঙ্গভূমি ধ্বনিত হইবে, এই বালক ভূমিষ্ঠ হওয়ায় আমার বংশে চিরস্থায়ী কীর্ত্তিলাভ হইল। আজ আমার স্বপ্নদর্শন সত্য হইল।”
সত্ত্বগুণসম্পন্ন ঈশ্বরপরায়ণ সাধু মহাপুরুষগণ সময়ে সময়ে ভগবৎপ্রেমে উন্মত্ত হইয়া আত্মহারা হইয়া পড়েন, তখন তাঁহাদের হৃদয়শায়ী ভূতভাবন ভগবান্ ভূত-কল্যাণের জন্য তাঁহাদের মুখ দিয়া যাহা বলান, তাঁহারাও ভূতাবিষ্টের ন্যায় তাহাই বলেন। এই সকল সারবান্ উক্তিই মহাপুরুষের মহাবাক্য নামে খ্যাত। তীর্থপর্য্যটনকারী, ধর্ম্মনিষ্ঠ, ঈশ্বরপরায়ণ রামজয়, বীরশিশু ঈশ্বরচন্দ্রকে সন্দর্শন করিয়াই বুঝিতে পারিয়াছিলেন, ঈশ্বরানুগৃহীত কোন মহাপুরুষ তাঁহার বংশে জন্মগ্রহণ করিলেন। সেইজন্য, তিনি ভগবৎ প্রেমে আত্মহারা হইয়া সদ্যোজাত শিশুর সম্বন্ধে যে সকল ভাবী উক্তি বলিয়াছিলেন, সেই সকল উক্তিই উত্তরকালে ঈশ্বরচন্দ্রের জীবনে ভবিষ্যদ্বাণী রূপে পরিণত হইয়াছিল।
ঈশ্বরচন্দ্রের ভূমিষ্ঠ হইবার কিছুক্ষণ পরে গ্রহবিপ্রশ্রেষ্ঠ কেনারাম আচার্য্য আসিয়া বালকের ঠিকুজী প্রস্তুত করিলেন। ঠিকুজী প্রস্তুত করিবার কালে ফল বিচার করিয়া কেনারাম বিস্মিত হইলেন। কোষ্ঠী গণনায় ভবিষ্যৎ জীবনের আভাষ পাওয়া যায়। আচার্য্য গণনার দ্বারা ব্যক্ত করিলেন,—“এই বালক ক্ষণজন্মা;