সঙ্গে লোক লইবার আবশ্যক নাই।” পরদিন ঠাকুরদাস পুত্রকে সঙ্গে লইয়া পাতুল গ্রামে রাধামোহন বিদ্যাভূষণের ভবনে অবস্থিতি করিলেন। তৎপর দিবস তথা হইতে তারকেশ্বরের সন্নিহিত রামনগরগ্রামে কনিষ্ঠা পিতৃসার বাটী যাত্রা করিলেন। রাজবলহাটের দোকানে উপস্থিত হইয়া ফলাহার করিলেন। তথা হইতে উঠিবার সময় বিদ্যাসাগর বলিলেন, ‘বাবা, আমি আর চলিতে পারিব না!” পিতা কতই বুঝাইলেন, তাহাতে বিদ্যাসাগর বলিলেন, ‘'দেখন পা ফলিয়া গিয়াছে, আর পা ফেলিতে পারিব না।” পিতা বলিলেন, “একট; চল, আগে যাইয়া তরমুজ কিনিয়া দিব।” এই বলিয়া ভুলাইতে আরম্ভ করিলেন, কিন্তু তিনি কিছুতেই এক পাও চলিলেন না। পিতা বলিলেন, “যদি চলিতে না পারিবে, তবে লোক সঙ্গে লইতে কেন বারণ করিলে?” এই বলিয়া প্রহার করিলেন। তাহাতে বিদ্যাসাগর রোদন করিতে লাগিলেন। তবে তুই এখানে থাক, আমি চলিলাম” এই বলিয়া পিতা কিয়দ্দুর গমন করিয়া দেখিলেন, পুত্র সেই স্থানে বসিয়া আছে, এক পাও চলে নাই। কি করেন, পিতা অগত্যা ফিরিয়া আসিয়া পুত্রকে কন্ধে লইয়া চলিলেন। কিয়ৎক্ষণ পরে বলিলেন, “এবার খানিক চল, আগের দোকানে তরমুজ কিনিয়া দিব।’ ঠাকুরদাস অতি খর্ব্বকায় ও ক্ষীণজীবি ছিলেন। সুতরাং তাঁহার পক্ষে অষ্টম বর্ষীয় বালককে কন্ধে করিয়া অধিক দর গমন করা সহজ ব্যাপার নহে। ঠাকুরদাস তাহাকে কখন স্কন্ধে, কখনও ক্রোড়ে করিয়া চলিলেন। অনন্তর তাঁহারা সন্ধ্যার সময় রামনগরের রামতারক মুখোপাধ্যায়ের বাটীতে উপস্থিত হইলেন। বিদ্যাসাগরের পদদ্বয়ের বেদনা লাঘবের জন্য পিতৃস্বসা অন্নপূর্ণা দেবী উষ্ণ তৈল দ্বারা পদদ্বয় মর্দ্দন করিয়া দিলেন। পরদিন পিতাপুত্রে তথায় অবস্থিতি করিলেন। তৎপরদিন বৈদ্যবাটীর পথে আগমন করিলেন, এবং নৌকাযোগে সন্ধ্যার সময় কলকাতায় উপস্থিত হইলেন।
হিন্দু কলেজ স্থাপিত হইলে, সহরে উচ্চ শিক্ষা দিবার পথ উন্মুক্ত হইয়াছিল। কিন্তু তৎপুর্ব্বে শিক্ষার অবস্থা অতিশয় শোচনীয় ছিল। অথচ মধ্যবিত্ত লোকদিকের অন্তঃকরণে সন্তানদিগকে ইংরাজী শিক্ষা দিবার প্রবৃত্তি দিন দিন প্রবল হইতে লাগিল। সুবিধা বুঝিয়া কয়েকজন ইংরাজ কলিকাতার স্থানে স্থানে ইংরাজী কুল স্থাপন করিলেন। এই সকল স্কুলে উত্তীর্ণ ছাত্রদিগের মধ্যে যাঁহারা প্রসিদ্ধ ছিলেন, তাঁহারা অসংলগ্ন ব্যাকরণহীন ইংরাজী বলিতে পারিতেন এবং লিখিতে পারিতেন বলিয়া তকালীন কলিকাতা সমাজে ইহাদের খ্যাতি প্রতিপত্তির সীমা ছিল না।
সে সময়ে যে ইংরাজী শিক্ষা দেওয়া হইত, তাহার বিষয় কিছু উল্লেখ করা আবশ্যক। সে সময়ে বাক্যরচনাপ্রণালী বা ব্যাকরণ প্রভৃতি শিক্ষা দিবার দিকে আদৌ দৃষ্টি ছিল না। কেবল ইংরাজী শব্দ ও তাহার অর্থ শিখাইবার দিকে প্রধানতঃ মনোযোেগ দেওয়া হইত। যে যত অধিকসংখ্যক ইংরজী শব্দ ও তাহার