পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৩১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিধবা-বিবাহ।
২৭৯

 ৺আনন্দকৃষ্ণ বাবু বলিয়াছিলেন,—“কোন বালিকা বিধবা হইয়াছে শুনিলে, বিদ্যাসাগর কাঁদিয়া আকুল হইতেন। এই জঙ্ক তাঁহাকে বলিতাম,তুমি কি ইহার কোন উপায় করিতে পার না? তাহাতে তিনি বলিতেন, পাস্ত্র প্রমাণ ভিন্ন বিধবাবিবাহের প্রচলন করা দুস্কর। আমি শাস্ত্রপ্রমাণ সংগ্রহে প্রবৃত্ত হইয়াছি।”

 শাস্ত্রানুসারে বিধবা-বিবাহের শাস্ত্রীয়তা সপ্রমাণ করা বিদ্যাসাগরের উদ্দেশ্য ছিল; কিন্তু প্রথমতঃ তিনি শাস্ত্রীয় প্রমাণ সংগ্রহ করিয়া উঠিতে পারেন নাই। রাজকৃষ্ণ বাবু বলেন,—“১২৬০ সালের বা ১৮৫৩ খৃষ্টাব্দের শেষ ভাগে এক দিন রাত্রিকালে বিদ্যাসাগর মহাশয় ও আমি একত্র বাসায় ছিলাম। আমি পড়িতেছিলাম। তিনি একখানি পুঁথির পাতা উল্টাইতেছিলেন। এই পুঁথিখানি পরাশর-সংহিতা। পাতা উল্টাইতে উল্টাইতে হঠাৎ তিনি আনন্দ বেগে উঠিয়া পড়িয়া বলিলেন,—'পাইয়াছি, পাইআছি।’ আমি জিজ্ঞাসিলাম,—কি পাইয়াছ?’ তিনি তখনই পরাশরসংহিতার সেই শ্লোকটা আওড়াইলেন,[১]

‘নষ্টে মৃতে প্রব্রজিতে ক্লীবে চ পতিতে পতৌ।
পঞ্চস্বাপৎসু নারীণাং পতিরন্যো বিধিয়তে।'


  1. ১২৯৮ সালের ৬ই ভাদ্র বা ১৮৯১ খৃষ্টাব্দের ২২শে আগষ্ট হিতবাদিতে ডাক্তার ৺অমূল্যচরণ বসু লিখিয়াছিলেন— তিনি স্কুল পরিদর্শনে কৃষ্ণনগরে গমন করেন। তথাকার রাজবাটীতে বিধবা-বিবাহের শাস্ত্রীয়তা সম্বন্ধে কথা উঠে। সেই আদর্শ ফলেই ‘পরাশর কৃত’ এই বচনটী শুনিতে পাইলেন। অমূল্য বাবু স্বয়ং টীকা করিয়া লিখিয়াছেন,—“এ বিষয় কিন্তু বিদ্যাসাগর মহাশয়ের কাছে বা অন্য সুত্রে শুনিয়াছিলাম, আমার ঠিক মনে নাই। সুরা ইহার সত্যাসত্যতা সম্বন্ধে কিছুই বলিতে পারি না। এ অবস্থায় রাজকৃষ্ণ বাবুর কথাই প্রমাণ।