পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৪৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বর্দ্ধমানে বিদ্যাসাগর।
৪৫৩

এত টাকা খরচ করিয়া বিলাত হইতে এ সব পুস্তক বাঁধাইয়া আনিয়া রাখিবার প্রয়োজন কি?” বিদ্যাসাগর মহাশয় ইহার উত্তরে বলেন,—“এক গাছি দড়ি দিয়া আপন ঘড়িটী বাঁধিয়া রাখিতে পারেন; তবে এত টাকার সোনার চেইনের প্রয়োজন কি? কম্বল গায়ে দিতে পারেন; শাল গায়ে দিয়েছেন কেন? পাগল আপনিও ত।”

 উত্তরপাড়ায় পড়িয়া যাইবার পর স্বাস্থ্যলাভার্থ বিদ্যাসাগর মহাশয় ফরাশডাঙ্গায় যাত্রা করেন। সেখানে কিন্তু সুবিধা না হওয়ায় তাঁহাকে বর্দ্ধমানে যাইতে হয়। বর্দ্ধমানে যাইয়া তিনি পরম মিত্র প্যারিচাঁদ মিত্রের বাড়ীতে থাকিতেন। প্যারিচাঁদ মিত্র জজ আদালতের সেরেস্তাদার ছিলেন।[১] প্রণয়-সদ্ভাবে বিদ্যাসাগর মহাশয় ও প্যারিচাঁদ বাবু হরি-হর-আত্মা। উভয়েই যেন এক পরিবারভুক্ত। বর্দ্ধমানেও বিদ্যাসাগর মহাশয়ের দান ও দয়ার কার্য্য অবিশ্রান্তভাবে চলিত। তাঁহার নাম শুনিলে অনেক দীন-দরিদ্র তাঁহার নিকট আগমন করিত। তিনি যাহার যেরূপ অভাব বুঝিতেন, তাহাকে সেইরূপ দান করিতেন। দানে তাঁহার জাতিবিচার ছিল না। অনেক দরিদ্র মুসলমান তাঁহার নিকট সাহায্য পাইয়া গুরুতর দায় হইতে

  1. প্যারিচাঁদ বাবু কলিকাতা-পটলডাঙ্গায় শ্যামাচরণ দে মহাশয়ের ভগিনীপতি ছিলেন। শ্যামাচরণ বাবুর ভগিনী অকালে প্রাণত্যাগ করিয়াছিলেন। প্যারী বাবুকে দ্বিতীয় বার দারপরিগ্রহ করিতে হয়। প্রথম পত্নী গত হইলেও প্যারী বাবু শ্যামাচরণ বাবুর সহিত পূর্ব্ববৎ সুদ্ভাব রাখিয়াছিলেন। প্যারী বাবুর দ্বিতীয় পত্নীও শ্যামাচরশ বাবুকে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার মত মনে করিতেন। শ্যামাচরণ বাবু বিদ্যাসাগর মহাশয়ের হৃদয়-বন্ধু। এই সূত্রে প্যারী বাবুর সহিত বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বন্ধুত্ব হয়।