পাতা:বিপ্রদাস - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মনে তাহার ক্ষোভের অবধি রহিল না। ক্ষোভ নানা ৰূরণে। বিমাতার সম্বন্ধে ', কথাটা আংশিক সত্য মাত্র এবং সে নিজেও যেন ইহাতে কতকটা জড়াইয়া গিয়াছে ? অথচ বুঝাইয়া বলিবার সুযোগও নাই, সময়ও নাই। অন্যপক্ষে ধীর-চিত্তে বুঝিবার মত মনোবৃত্তির একান্ত অভাব। সুতরাং চুপ করিয়া থাকা ভিন্ন আর উপায় ছিল না-বিপ্ৰদাস একেবারেই নীরব হইয়া রহিল। ছোকরা সাহেব পা নীচে নামাইয়া হাই তুলিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, আপনি জমিদার বিপ্ৰদাসবাবু না ? 数排 আপনার নাম শুনেচি ; পাশের গায়ে আমার স্ত্রীর মাম৷র বাড়ী, বেঙ্গলে যখন আসা-ই হল তখন ওরু ইচ্ছে একবাব দেখা করে যান। তাই আসা । আমি পাঞ্জাবে প্র্যাকটিস করি । বিপ্ৰদাস চাহিয়া দেখিল লোকটি তাহারই সমবয়সী-এক-আধা বছরের এদিকহইতে পারে, তার বেশি নয়। সাহেব কহিতে লাগিলেন, কালই আপনার কথা হচ্ছিল। লোকে বলে আপনি ভয়ানক, অৰ্থাৎ কিনা খুব কড়া জমিদার। অবশ্য দু-চারজন বামুন পণ্ডিত গোড়া হিন্দু বলে বেশ তারিফও করলে ; এখন দেখচি কথাটা মিথ্যে নয় । অপরিচিতের এই অযাচিত আলোচনায় বন্দন ও তাহার পিতা উভয়েই আশ্চৰ্য্য হইলেন, কিন্তু বিপ্রদাস কোন উত্তর দিল না । বোধ হয় সে এমনি অন্যমনস্ক ছিল। যে সকল কথা তাহার কানো যায় নাই । তিনি পুনশ্চ বলিতে লাগিলেন, আমার লেকচারে আমি প্ৰায়ই বলে থাকি যে, চাই রিয়েল সলিড শিক্ষা — ফাকিবাজী, ধাপ্লাবাজি নয়। আপনার উচিত একবার ইয়োরোপ ঘুরে আসা । সেখানকার আবহাওয়া, সেখানকার ফ্রি এয়ার ব্ৰিঙ্গ ক’রে না -এলে মনের মধ্যে freedom আসে না-কুসংস্কার মন থেকে মুক্ত হতে চায় না । আমি একাধিক্রমে পাঁচ বৎসর সে-দেশে ছিলাম । বন্দনার পিতা শেষ কথাটায় খুশী হষ্টিয়া কহিলেন, একথা সত্যি । উৎসাহ পাইয়া তিনি গরম হইয়া উঠিলেন, বলিলেন, এই ডিমোক্র্যাসির যুগে সবাই সমান, কেউ কারো ছোট নয়, এবং চাই প্ৰত্যেকেরই নিজের অধিকার জোর করে assert করা-consequence তার যা-ই কেন না হোক আমার টাকা থাকলে আপনার জমিদারীর প্রত্যেক প্ৰজাকে আমি নিজের খরচে ইয়োরোপ ঘুরিয়ে আনতাম । নিজের right কাকে বলে এ-কথা তারা তখন নিজেরাই বুঝত। Rr