পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
১৪১

প্রথা হইয়া দাঁড়াইয়াছিল। ত্রিপুরী কংগ্রেসের অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি শেঠ গোবিন্দ দাসের ভাষায় বলতে গেলে “a practice has grown up to elect as the congress president the person upon whom Mahatma Gandhi's choice falls” কাজেই, এ পর্য্যন্ত কংগ্রেস-সভাপতি নির্বাচনে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় নাই। সকলেই আশা করিয়াছিলেন গান্ধীজীর মধ্যস্থতায় এই অপ্রীতিকর নির্ব্বাচন দ্বন্দ্বের অবসান হইবে। কিন্তু মহাত্মা বাঙ্‌নিষ্পত্তি করিলেন না—একরূপ বিস্ময়কর নীরবতা অবলম্বন করিয়া রহিলেন। মহাত্মাজীর কোন ইঙ্গিত না পাইয়া ডেলিগেটগণ নিজ নিজ ইচ্ছানুযায়ী সভাপতি নির্ব্বাচনে প্রবৃত্ত হইলেন। ফলে কংগ্রেসের ইতিহাসে সর্ব্বপ্রথম সভাপতি পদের জন্য নির্ব্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হইল। নির্ব্বাচন পর্য্যন্ত সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের নেতৃত্বে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে নানা প্রকার অভিসন্ধিমূলক হীন ষড়যন্ত্র চলিতে থাকে। কিন্তু নির্ব্বাচনে জনগণ সুভাষচন্দ্রের অনুকূলেই রায় প্রদান করিলেন—কিঞ্চিদধিক দুইশত ভোটাধিক্যে সুভাষচন্দ্র দ্বিতীয়বার কংগ্রেসের সভাপতি নির্ব্বাচিত হইলেন। কেবল বাঙ্‌লা নহে, যুক্তপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, পাঞ্জাব, কেরলা, দিল্লী, আজমীর, আসাম, কর্ণাটক হইতেও তিনি বিপুল সমর্থন লাভ করেন। জনগণের রায় তাহাদের চিরপ্রিয় নির্ভীক যোদ্ধা সুভাষচন্দ্রের সমর্থনেই ঘোষিত হইল। সুভাষচন্দ্রের জয়লাভে গর্বান্ধ উপদলীয় প্রভুত্বের দর্প চূর্ণ হইল। সবজননিন্দিত যুক্তরাষ্ট পরিকল্পনাকে ভারতবর্ষের স্কন্ধে জোর করিয়া চাপাইবার গোপন চক্রান্ত ব্যর্থতায় পর্য্যবসিত হইল। সুভাষচন্দ্রের জয়লাভে ক্ষমতাভিমানী প্রবীণ দলের বিরুদ্ধে নবীনদলের জয় সূচিত হইল। তাঁহার পুনর্নির্ব্বাচনে কংগ্রেসের গতানুগতিকতা ও আপোষরফামূলক মোলায়েম নীতির পথ রুদ্ধ হইল।