পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট
৩০৯

পৃথিবী। সে কালের কংগ্রেস যে রাজদরবারের রুদ্ধ দ্বারে বৃথা মাথা খোঁড়াখুড়ি করে মরত, আজ সেই দরবারে তার সম্মান অবারিত। এমনকি সেই দরবার কংগ্রেসের সঙ্গে আপোষ করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। কিন্তু মনু বলেছেন সম্মানকে বিষের মত জানবে। পৃথিবীতে যে দেশেই যে কোন বিভাগেই ক্ষমতা অতি প্রভূত হয়ে সঞ্চিত হয়ে উঠে সৈখানেই সে ভিতরে ভিতরে নিজের মারণ বিষ উদ্ভাবিত করে। ইম্পিরিয়ালিজম্ বল, ফ্যাসিজম বল, অন্তরে নিজের বিনাশ নিজেই সৃষ্টি করে চলেছে। কংগ্রেসের অন্তর-সঞ্চিত ক্ষমতার তাপ হয়তো তার অস্বাস্থ্যের কারণ হয়ে উঠেছে বলে সন্দেহ করি। যাঁরা এর কেন্দ্রস্থলে এই শক্তিকে বিশিষ্টভাবে অধিকার করে আছেন, সঙ্কটের সময় তাঁদের ধৈর্য্যচ্যুতি হয়েছে; বিচারবুদ্ধি সোজা পথে চলে নি। পরস্পরের প্রতি যে শ্রদ্ধা ও সৌজন্য, যে বৈধতা রক্ষা করলে যথার্থভাবে কংগ্রেসের বল ও সম্মান রক্ষা হত তার ব্যভিচার ঘটতে দেখা গেছে; এই ব্যবহার-বিকৃতির মূলে আছে শক্তি ও স্পর্ধার প্রভাব। খৃষ্টান শাস্ত্রে বলে স্ফীতকায় সম্পদের পক্ষে স্বর্গরাজ্যের প্রবেশ পথ সঙ্কীর্ণ, কেননা ধনাভিমানী ক্ষমতা আনে তামসিকতা। কংগ্রেস আজ বিপুল সম্মানের ধনে ধনী, এতে তার স্বর্গরাজ্যের পথ করেছে বন্ধুর। মুক্তির সাধনা তপস্যার সাধনা, সেই তপস্যা সাত্ত্বিক—এই জানি মহাত্মার উপদেশ। কিন্তু এই তপঃক্ষেত্রে যাঁরা রক্ষকরূপে একত্র হয়েছেন তাঁদের মন কি উদারভাবে নিরাসক্ত? তাঁরা পরস্পরকে আঘাত করে যে বিচ্ছেদ ঘটান সে কি বিক্ষুব্ধ সত্যেরই জন্য। তাঁর মধ্যে কি সে উত্তাপ একেবারে নেই যে উত্তাপ শক্তিগর্ব্ব ও শক্তিলোপ থেকে উদ্ভূত? ভিতরে ভিতরে কংগ্রেসের মন্দিরে এই যে শক্তি-পূজার বেদী গড়ে উঠেছে তার কি স্পর্ধিত প্রমাণ এবারে পাইনি যখন মহাত্মাজীকে তার ভক্তেরা মুসোলিনী ও হিট্‌লারের মর্ম্মকথা বলে বিশ্বসমক্ষে অসম্মানিত করতে পারলেন?