পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পাঁচ

 ১৯১৯ খৃষ্টাব্দে সুভাষচন্দ্র ব্যবহারিক মনােবিজ্ঞানে বিশ্ববিদ্যালয়ে এম, এ ক্লাশে ভর্ততি হন। কিন্তু কয়েক মাস পরে হঠাৎ একদিন তাঁহার পিতা তাঁহার নিকট আই, সি, এস (ভারতীয় সিভিল সার্ভিস) পরীক্ষায় প্রতিযােগিতা করিবার জন্য বিলাত যাত্রার প্রস্তাব করেন। আই, সি, এস পড়িতে সুভাষচন্দ্রের মােটেই ইচ্ছা ছিল না—উহা দেশসেবার অন্তরায় হইবে কিনা, এই চিন্তা তখন তাঁহাকে ব্যাকুল করিয়া তুলিয়াছিল। তখনকার রাজনৈতিক অবস্থাও ঘাের সঙ্কটময়। রাওলাট আইন পাশ হইয়াছে—দেশবাসীর ন্যায্য অধিকারের সংগ্রামকে রক্তস্রোতে প্লাবিত করিয়া দিয়া জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ড অনুষ্ঠিত হইয়াছে। দেশের মুসলমানেরাও তথন জাগ্রত। খিলাফৎ আন্দোলন পূর্ণোদ্যমে চলিতেছে। দেশের সর্ব্বত্র দারুণ অসন্তোষ। এই অবস্থায় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার জন্য বিলাত যাওয়া সুভাষচন্দ্রের ন্যায় দেশপ্রেমিকের পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি কিছুতেই রাজী ছিলেন না—তাঁহার বন্ধু বান্ধবেরা বুঝাইলেন বিদেশে শিক্ষা লাভের এই সুযােগ ছাড়া উচিত নয়। একদিকে পিতামাতা ও আত্মীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধবদের একান্ত ইচ্ছা, অন্যদিকে সিভিলিয়ান পদের প্রতি নিজের অশ্রদ্ধা—এই দোটানায় পড়িয়া সুভাষচন্দ্রকে কয়েকদিন “মানসিক ঝড়ের” মধ্যে কাটাইতে হইয়াছিল। যাহাই হউক, অবশেষে, সুভাষচন্দ্র অগত্যা নিজের অনিচ্ছাসত্ত্বেও বিলাত যাত্রায় মত দেন এবং ১৯১৯ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর কলিকাতা পরিত্যাগ করেন। সুভাষচন্দ্র ভাবিয়াছিলেন যে, এত অল্প সময়ের মধ্যে আই, সি, এস পরীক্ষায় কৃতকার্য্য হওয়া সম্ভবপর হইবে না, তাই কেম্ব্রিজের ডিগ্রী লইয়া আসিয়া তিনি শিক্ষাদান ব্রত গ্রহণ করিবেন। বিলাতে গিয়া কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী লাভ করা তাঁহার নিজেরও একটা প্রাথমিক উদ্দেশ্য