পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

এখন উপায়?” সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাশ করিয়া তিনি সুখী হইতে পারেন নাই; কেননা, তিনি জানিতেন এখন তাঁহার উপর চাকুরি গ্রহণের চাপ আসিবে এবং তাহা অগ্রাহ্য করাও শক্ত হইবে। অথচ সিভিল সার্ভিসে যোগদান করিলে সাম্রাজ্যবাদী শাসন ও শোষণযন্ত্রের অন্যতম চালক হইতে হইবে। পূর্ব্ব হইতেই বন্ধুর সঙ্গে কথা ছিল, যদি পাশ করেন তাহা হইলে I. C. S. পদ পরিত্যাগ করিয়া চাকুরিপ্রিয় বাঙালীর সম্মুখে নূতন আদর্শ স্থাপন করিবেন। তখন ১৯২০ সাল। নাগপুর কংগ্রেসে অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব গৃহীত হইয়াছে। দেশ তখন আসন্ন সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হইতেছে। সুভাষচন্দ্রের অন্তরেও এই আহ্বান পৌঁছিয়াছে। তিনি তাঁহার কর্ত্তব্য স্থির করিয়া ফেলিলেন। সেই সময় তাঁহার সম্মুখে সিভিল সার্ভিসের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ—কিন্তু শৃঙ্খলিতা মাতৃভূমির আহ্বানে ভারতসচিব মিঃ মণ্টেগুর অশেষ অনুরোধ সত্ত্বেও তিনি সিভিল সার্ভিস পদে ইস্তফা দিলেন। ভারতের জাতীয় আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করিবার জন্য সুভাষচন্দ্র আর কালবিলম্ব না করিয়া ভারতবর্ষে রওনা হইলেন। ইতিমধ্যে তিনি কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় হইতে দর্শনে অনার্সসহ বি, এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। আই, সি, এস, পদ ছাড়িবার পূর্ব্বেই তিনি দেশবন্ধুর সহিত পত্রালাপ করেন। দেশবন্ধু তাঁহাকে National College ও তাঁহার পরিচালিত সাময়িকপত্র পরিচালনার ভার দিবেন বলিয়া পত্র লিখিয়াছিলেন। ১৯২১ সালের ১৬ই জুলাই সুভাষচন্দ্র বোম্বাই পৌঁছিয়া মণিভবনে মহাত্মা গান্ধীর সহিত সাক্ষাৎ করেন। সুভাষচন্দ্র সিভিল সার্ভিস পদ পরিত্যাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণ বর্ণনা করিতে গিয়া লিখিয়াছেন যে, একই সময়ে দুই প্রভুর অর্থাৎ বৃটিশ সরকার ও দেশের সেবা করা তাঁহার পক্ষে সম্ভবপর হইবে না বিবেচনা করিয়াই তিনি ঐ পদে ইস্তফা দেন এরং জাতীয় আন্দোলনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করিবার জন্য সত্বর ভারতবর্ষে প্রত্যাবর্ত্তন করেন।