পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
২৫

এই প্রথম সাক্ষাৎকার মোটেই ফলপ্রসূ হয় নাই। সুভাষচন্দ্র হতাশ হইয়া সে স্থান পরিত্যাগ করেন। এই সম্পর্কে তিনি লিখিয়াছিলেন, “আমার যুক্তি আমাকে বার বার বলিয়া দিতে লাগিল যে, মহাত্মা যে পরিকল্পনা স্থির করিয়াছেন তাহার মধ্যে সুস্পষ্টতার শোচনীয় অভাব রহিয়াছে। যে আন্দোলন বা সংগ্রাম আমাদিগকে আমাদের অভীপ্সিত উদ্দেশ্য স্বরাজলাভের দিকে লইয়া যাইবে সেই সংগ্রামের ক্রমবিকাশ বা বিভিন্ন স্তর সম্বন্ধে তাঁহার নিজেরই কোন স্পষ্ট ধারণা নাই।” যাহাই হউক, গান্ধীজীর পরামর্শে তিনি বাঙ্‌লার অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের সহিত সাক্ষাৎ করেন। ভারতের রাজনৈতিক গগনে দেশবন্ধু তখন মধ্যাহ্ন ভাস্করের তেজে জাজ্বল্যমান—সংগ্রামশীল কর্ম্মপন্থার জন্য সারাদেশ তখন দেশবন্ধুর দিকে চাহিয়া আছে। দেশবন্ধুর অপূর্ব্ব ত্যাগ ও দুঃখবরণ তখন জাতির আদর্শ। দেশবন্ধুর সান্নিধ্য লাভ করিয়াই সুভাষচন্দ্র বুঝিলেন, তিনি উপযুক্ত নেতা ও গুরু লাভ করিয়াছেন। সুভাষচন্দ্র সেইদিনই তাঁহার রাজনৈতিক গুরুকে কৃতজ্ঞচিত্তে অভিনন্দিত করিয়া লইলেন ও “দেশবন্ধুর কাজে” আত্মনিয়োগ করিতে সঙ্কল্পবদ্ধ হইলেন। দেশবন্ধুর সহিত সুভাষচন্দ্রের সম্বন্ধ লেনিনের সহিত ষ্ট্যালিনের সম্বন্ধের সহিত তুলনীয়।

 ১৯২০ সালে নাগপুর কংগ্রেসে অসহযোগ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। গভর্ণমেণ্টের উপাধি ও চাকুরী ত্যাগের হিড়িক পড়িয়া যায়। সেই সময় গভর্ণমেণ্ট-পরিচালিত স্কুল কলেজ ত্যাগের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই অবস্থায় দেশের শিক্ষাবিস্তারে যাহাতে কোনরূপ বিঘ্ন না ঘটিতে পারে তজ্জন্য কংগ্রেসের পরিচালনায় বিভিন্ন প্রদেশে জাতীয় বিদ্যালয় স্থাপিত হইতে থাকে। ১৯২১ সালের মে মাসে দেশবন্ধু, সুভাষচন্দ্রের হস্তে বাঙলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় “গৌড়ীয় সর্ব্ববিদ্যায়তনে”র পরিচালনাভার অর্পণ করেন। এই সময় দেশবন্ধু সুভাষচন্দ্রের উপর