পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

আবদ্ধ রাখা হয়। জেলে থাকিয়াই তিনি কর্পোরেশনের কাজকর্ম্ম চালাইতে লাগিলেন। কিন্তু গভর্ণমেণ্ট তাঁহাকে বেশী দিন সে সুযোগও দিলেন না। তাঁহাকে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর জেলে স্থানান্তরিত করা হইল। সেখানে অল্প কিছুদিন রাখিবার পরেই সহসা একদিন তাঁহার উপর মান্দালয়ে নির্ব্বাসনের আদেশ জারি করা হয়। ১৯২৫ সালের ২৬শে জানুয়ারী রাত্রির অন্ধকারে পুলিশরক্ষীদল পরিবেষ্টিত হইয়া সহকারী ইনপেক্টর জেনারেল মিঃ লোম্যান সুভাষচন্দ্র ও অপর সাতজন রাজবন্দীকে কয়েদীর গাড়ীতে তুলিয়া মান্দালয় অভিমুখে যাত্রা করেন। এই নিঃস্বার্থ, নির্ভীক দেশপ্রেমিক গভর্ণমেণ্টের এতই দুশ্চিন্তা ও ভয়ের কারণ হইয়াছিলেন যে, তাঁহাকে ভারতের কারাগারে রাখাও নিরাপদ বলিয়া বিবেচিত হয় নাই। তাই সুদূর ব্রহ্মদেশের অস্বাস্থ্যকর ও কুখ্যাত মান্দালয় জেলই এই চিরবিদ্রোহী দেশকর্ম্মীর আবাসস্থল বলিয়া নির্দ্ধারিত হইল। সুভাষচন্দ্রের গ্রেফ্‌তারে কর্পোরেশনের যথেষ্ট ক্ষতি হয়। তাঁহাকে বিনাবিচারে কারারুদ্ধ করায় দেশব্যাপী প্রবল বিক্ষোভের সঞ্চার হয়। সরকারের এই কার্য্যের প্রতিবাদে আহূত কর্পোরেশনের এক সভায় মেয়র দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন জ্বালাময়ী ভাষায় বলেন, দেশপ্রেম যদি অপরাধ হয়, তবে শুধু প্রধান কর্ম্মকর্ত্তাই নহেন, আমিও অপরাধী—এই কর্পোরেশনের মেয়রও সমান অপরাধে অপরাধী। বলা বাহুল্য, সুভাষচন্ত্রের গ্রেফ্‌তারে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনই সর্ব্বাপেক্ষা অধিক আঘাত পাইয়াছিলেন। জনৈক লেখক লক্ষ্মণের শক্তিশেলে রামচন্দ্রের অবস্থার সহিত দেশবন্ধুর সে সময়কার অবস্থার তুলনা করিয়াছেন।