পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দশ

 সুভাষচন্দ্রের জীবন সংশয়াপন্ন; অথচ বিনাসর্ত্তে মুক্তি ভিন্ন অন্য কিছুতেই তিনি রাজী নহেন। অবশেষে সুভাষচন্দ্রের মৃত্যুর দায়িত্ব এড়াইবার জন্য গভর্ণমেণ্ট তাঁহাকে ১৯২৭ সালের ১৫ই মে রেঙ্গুন হইতে কলিকাতায় লইয়া আসেন। ডায়মণ্ড হারবারের সন্নিকটে জাহাজ থামাইয়া লাট বাহাদুরের লঞ্চে সুভাষচন্দ্রকে তুলিয়া লওয়া হয়। লঞ্চে ডাঃ স্যার নীলরতন সরকার, ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়, লেঃ কর্ণেল স্যাণ্ডস্‌ ও গভর্ণরের চিকিৎসক হাংষ্টন তাঁহাকে পরীক্ষা করেন। পরদিন প্রাতে ১৬ই মে গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান কর্ত্তা সুভাষচন্দ্রের হস্তে ভগ্নস্বাস্থ্যবশতঃ বিনাসর্ত্তে মুক্তিদানের আদেশপত্রখানি অর্পণ করেন। যখন তাঁহাকে গ্রেফতার করা হয় তখন তিনি স্বাস্থ্যবান, বলবান ও অক্লান্ত পরিশ্রমী যুবক ছিলেন আর এখন তিনি মুক্তিলাভ করিলেন অস্থিচর্মসার রোগজীর্ণ দেহ লইয়া।

 মান্দালয়ের জেলখানায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ভগ্নস্বাস্থ্য হইলেও সুভাষচন্দ্রের মনোবল ও আত্মবিশ্বাস অটুট ছিল। “দেশমাতৃকার উদ্ধার সাধনের যে মহৎ ব্রত তিনি গ্রহণ করিয়াছেন সেই ব্রত উদ্‌যাপিত না হওয়া পর্য্যন্ত তাঁহাকে অবিরাম সংগ্রাম করিয়া যাইতে হইবে। ভবিষ্যতের দিকে চাহিয়া সাহস ও শক্তি সঞ্চয় করিতে হইবে।” কারামুক্তির পর তিনি লিখিয়াছিলেন, “দেশান্তরে কারাবাসে মাসের পর মাস যখন কাটিয়েছি তখন প্রায়ই এই প্রশ্ন আমার মনে উঠ্‌ত, কিসের জন্য, কিসের উদ্দীপনায় আমরা কারাবাসের চাপে ভগ্নপৃষ্ট না হয়ে আরও শক্তিমান হয়ে উঠছি? নিজের অন্তরে যে উত্তর পেতাম তার মর্ম এই:—

 ভারতের একটা Mission আছে, একটা গৌরবময় ভবিষ্যৎ আছে; সেই ভবিষ্যৎ ভারতের উত্তরাধিকারী আমরাই। নূতন ভারতের মুক্তির