পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৯).pdf/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S 0S दिदि१ éदइक সুহৃদকে বিনাদোষে বধ করিতে সত্য করে, তবে সে সত্য কি পালনীয় ? যে কেহ ঘোরতর মহাপাতক করিতে সত্য করে, তাহার সত্য কি পালনীয় ? যেখানে সত্য লঙ্ঘনপেক্ষা সত্য রক্ষায় অধিক অনিষ্ট, সেখানে সত্য রাখিবে, না। সত্য ভঙ্গ করিবে ? অনেকে বলিবেন, সেখানেও সত্য পালনীয় ; কেন না, সত্য নিত্যধৰ্ম্ম, অবস্থাভেদে তাহা পুণ্যত্ব পাপত্ব প্রাপ্ত হয় না। যদি পাপ পুণ্যের এমন নিয়ম করা যে, যখন যাহা কৰ্ম্মকৰ্ত্তার বিবেচনায় ইষ্টকারক, তাহাই কৰ্ত্তব্য ; যাহা তঁহার তাৎকালিক বিবেচনায় অনিষ্টকারক, তাহ অকৰ্ত্তব্য, তবে পুণ্য পাপের প্রভেদ থাকে না— লোকে পুণ্য বলিয়া ঘোরতর মহাপাতকে প্ৰবৃত্ত হইতে পারে। আমরা এ তত্ত্বের মীমাংসা এ স্থলে করিব না-কেন না, হিতবাদীরা ইহার এক প্ৰকার মীমাংসা করিয়া রাখিয়াছেন। স্থূল কথার উত্তর দিব । যখন এরূপ মীমাংসার গোলযোগ হইবে, তখন ধৰ্ম্মনীতির যে মূল সূত্র সংস্থাপিত হইয়াছে, তাহার দ্বারা পরীক্ষা কর। সত্য কি সর্বত্র পালনীয় ? এ কথার মীমাংসা করিবার আগে জিজ্ঞাস্য, সত্য পালনীয় কেন ? সত্য পালনের একটি মূল ধৰ্ম্মনীতিতে, একটি মূল আত্ম-সংস্কারনীতিতে। আমরা আত্ম-সংস্কার নীতিকে ধৰ্ম্মনীতির অংশ বলিয়া পরিগণিত করিতে অস্বীকার করিয়াছি ; ধৰ্ম্মনীতির মূলই দেখিব। বিশেষ উভয়ের ফল একই। ধৰ্ম্মনীতির মূল সূত্র, পরের অনিষ্ট যাহাতে হয়, তাহ অকৰ্ত্তব্য। সত্যভঙ্গে পরের অনিষ্ট হয়, এজন্য সত্য পালনীয়। কিন্তু যখন এমন ঘটে যে, সত্য পালনে পরের গুরুতর অনিষ্ট, সত্য ভঙ্গে তত দূর নহে, তখন সত্য পালনীয় নহে। দশরথের সত্যপালনে রামের গুরুতর অনিষ্ট ; সত্য ভঙ্গে কৈকেয়ীর তােদৃশ কোন অনিষ্ট নাই। দৃষ্টান্তজনিত জনসমাজের যে অনিষ্ট, তাহা রামের স্বাধিকারচু্যতিতেই গুরুতর। উহা দসু্যতার রূপান্তর। অতএব এমত স্থলে দশরথ সত্যপালন করিয়াই মহাপাপ করিয়াছিলেন। এখানে দশরথ স্বার্থপরতাশূন্য নহেন। সত্য ভঙ্গে জগতে তাহার কলঙ্ক ঘোষিত হইবে, এই ভয়েই তিনি রামকে অধিকারচু্যত এবং বহিষ্কৃত করিলেন ; অতএব যশোরক্ষারূপ স্বার্থের বশীভুত হইয়া রামের অনিষ্ট করিলেন। সত্য বটে, তিনি আপনার প্রাণহানিও স্বীকার করিয়াছিলেন ; কিন্তু তঁহার কাছে প্ৰাণাপেক্ষ যশ প্রিয়, অতএব আপনার ইষ্টই খুজিয়াছিলেন। এজন্য তিনি স্বার্থপর। বার্থপরতা-দোষযুক্ত যে অনিষ্ট, তাহা ঘোরতর পাপ ।