পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৯).pdf/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উত্তরচরিত। উত্তরচরিতের উপাখ্যানভাগ রামায়ণ হইতে গৃহীত । ইহাতে রামকর্তৃক সীতার প্রত্যাখ্যান ও তৎসঙ্গে পুনৰ্ম্মিলন বর্ণিত হইয়াছে। স্কুল বৃত্তান্ত রামায়ণ ঠাইতে গৃহীত বঢ়ে, কিন্তু অনেক বিষয় ভবভূতির স্বকপোলকল্পিত । রামায়ণে যেরূপ বাল্মীকির আশ্রমে সীতার বাস, এবং যেরূপ ঘটনায় পুনৰ্ম্মিলন, এবং মিলনান্তেই সীতার ভূতল প্রবেশ ইত্যাদি বর্ণিত হইয়াছে, উত্তরচরিতে সে সকল সেরূপ বৰ্ণিত হয় নাই । উত্তর চরিতে সীতার রসাতলবাস, লবের যুদ্ধ এবং তদন্তে সীতার সহিত রামের পুনৰ্ম্মিলন ইত্যাদি বৰ্ণিত হইয়াছে । এইরূপ ভিন্ন পন্থায় গমন করিয়া, ভবভূতি রসজ্ঞতার এবং আত্মশক্তি জ্ঞানের পরিচয় দিয়াছেন। কেন না, যাহা একবার বাল্মীকিকর্তৃক বর্ণিত হইয়াছে, পৃথিবীর কোন কবি তাহা পুনৰ্ব্বণনা করিয়া প্ৰশংসাভাজন হইতে পারেন ? - যেমন ভবভূতি এই উত্তর চরিতের উপাখ্যান অন্য কবির গ্রস্থ হইতে গ্ৰহণ করিয়াছেন, তেমনি সেক্ষপীয়রা তাহার রচিত প্রায় সকল নাটকেরই উপাখ্যানভাগ অন্য গ্ৰন্থকারের গ্রন্থ হইতে সংগ্ৰহ করিয়াছেন, কিন্তু তিনি ভবভূতির ন্যায় পূর্বকবিগণ হইতে ভিন্ন পথে গমন করেন নাই । ইহার ৫ বিশেষ কারণ আছে। সেক্ষপীয়র অদ্বিতীয় কবি। তিনি স্বীয় শক্তির পরিমাণ বিলক্ষণ বুঝিতেন—কোন মহাত্মা না বুঝেন ? তিনি জানিতেন যে, যে সকল গ্ৰন্থ কারদিগের গ্ৰন্থ ফাইতে তিনি আপন নাটকের উপাখ্যানভাগ গ্রহণ করিয়াছিলেন, তাহার কেহ ঈ তাহার সঙ্গে কবিত্বশক্তিতে সমকক্ষ নহেন। তিনি যে আকাশে আপন কবিত্বের প্রোজুল কিরণমালা বিস্তার করিবেন, সেখানে পূৰ্ব্বগামী নক্ষত্ৰগণের কিরণ লোপ পাইবে । এজন্য ইচ্ছাপূর্বকই পূৰ্ব্বলেখকদিগের অনুবত্তী হইয়াছিলেন । তথাপি ইহা ও বক্তব্য যে, কেবল একখানি নাটকের উপাখ্যানভাগ তিনি হোেমর হইতে গ্ৰহণ করিয়াছিলেন, এবং সেই ত্ৰৈলস ও ক্রেসিদা নাটক প্রণয়নকালে, ভবভূতি যেরূপ রামায়ণ হইতে ভিন্ন পথে গমন করিয়াছেন, তিনিও তেমনি ইলিয়দ হইতে ভিন্ন পথে গিয়াছেন। ভবভূতিও সেক্ষপীয়রের ন্যায় আপন ক্ষমতার পরিমাণ জানিতেন । তিনি আপনাকে, সীতানিৰ্ব্বাসন বৃত্তান্ত অবলম্বনপূর্বক একখানি অত্যুৎকৃষ্ট নাটক প্রণয়নে সমর্থ বলিয়া,